বাংলাদেশ বনাম ভারত (১ম টেস্ট) – হাইলাইটস
১৪ই ডিসেম্বর চট্টগ্রামে ২টি টেস্ট সিরিজের ১ম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও বাংলাদেশ। ঐ ম্যাচে ১ম ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে বিশাল এক লক্ষ্য দাড় করায় ভারত। এরপর বিশাল রানের ট্রায়েল নিয়ে ১ম ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে ২০০ রানের আগেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ২য় ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে বুঝে শুনে টার্গেট রেডি করার পর ইনিংস ঘোষণা দেন ভারত। এরপর বিশাল লক্ষ্য নিয়ে ২য় ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে অনেক প্রচেষ্টা চালিয়েও লক্ষ্য পর্যন্ত পৌছাতে পারেন নেই বাংলাদেশ। ফলে সিরিজের ১ম ম্যাচে হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের। অন্যদিকে এই ম্যাচ জিতে সিরিজ জয়ের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যায় ভারত। এছাড়া ২ ইনিংসে ৮ উইকেট শিকারের সুবাদে ম্যাচ সেরার খেতাব নিজের করে নেয় কুলদীপ যাদব।
টসে জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ১ম দিন ৬ উইকেট হারিয়ে ২৭৮ রান দাড় করায় ভারত। এর মধ্যে ৯০ রানই করেন চেতেশ্বর পূজারা। ৯০ রান করতে খেলেন ২০৩ বল সাথে মেরেছিলেন ১১টি চার। এছাড়া ৪৬ রান করেছিলেন ঋষভ পান্ত। ২য় দিন স্বীকৃত ব্যাটারদের মধ্যে ছিলেন কেবল শ্রেয়াস আইয়ার। সকাল সকাল সেই কাঁটা উপড়ে নেন এবাদত হোসেন। ১৯২ বলে ১০ বাউন্ডারিতে ৮৬ রান করেন আইয়ার। ২৯৩ রানে ভারত হারায় ৭ উইকেট। এরপর লোয়াার অর্ডারের রবিচন্দ্রন অশ্বিন আর কুলদ্বীপ যাদব সেই হিসেব বদলে দেন। ২০০ বল খেলে তারা গড়ে ফেলেন ৮৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ এক জুটি। অবশেষে এই জুটিটি ভাঙেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ১১৩ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় অশ্বিনের ইনিংসটি ছিল ৫৮ রানের। অশ্বিন আউট হওয়ার পর অবশ্য কুলদ্বীপও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। পরের ওভারেই তাইজুল এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন তাকে (৪০)। ১৩৩.৫ ওভারে ভারত অলআউট হয় ৪০৪ রানে।
বাংলাদেশের দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম আর মেহেদি হাসান মিরাজ নিয়েছেন ৪টি করে উইকেট। এছাড়া ১টি করে উইকেট শিকার করেন এবাদত হোসেন ও খালেদ আহমেদ।
২য় দিন ১ম ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১৩৩ রান করতে পারে বাংলাদেশ। তার মধ্যে সবথেকে বেশি রান করেছিলেন মুশফিকুর রহিম। ৫৮ বল খলে ৩ চারের সাহায্যে করেছিলেন ২৮ রান। এছাড়া ৩০ বলে ২৪ রান করেছিলেন লিটন দাস। এরপর চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন শুরু করার পর আর মাত্র ১৭ রান যোগ করতে পারে বাংলাদেশ। ১৫০ রানে গিয়ে অলআউট হয় টাইগাররা। যার ফলে ২৫৪ রানের বিশাল লিড পেয়ে যায় সফরকারী ভারত।
ভারতের কুলদ্বীপ যাদব ৪০ রান দিয়ে শিকার করেন ৫ উইকেট। ৩ উইকেট মোহাম্মদ সিরাজের। এছাড়া ১টি করে উইকেট শিকার করেন উমেশ যাদব ও অক্ষর প্যাটেল।
চট্টগ্রাম টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ২ উইকেটে ২৫৮ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছে ভারত। ফলে বাংলাদেশের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়িয়েছিল ৫১৩ রানের। টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ডটি ৪১৮ রানের। অর্থাৎ এই টেস্টে জিততে হলে বাংলাদেশকে বিশ্বরেকর্ড গড়তে হত। অধিনায়ক লোকেশ রাহুলকে ব্যক্তিগত ২৩ রানে ফেরান খালেদ আহমেদ। এরপর চেতেশ্বর পূজারা আর শুভমান গিল ১১৩ রানের বড় জুটি গড়েন। গিল করেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। ১৫২ বলে ১০ চার ৩ ছক্কায় ১১০ রানের ইনিংস খেলা এই ওপেনারকে ফেরান মেহেদি হাসান মিরাজ। সেঞ্চুরি করেন পূজারাও। ১৩০ বলে ১৩ বাউন্ডারিতে ১০২ রানে অপরাজিত থাকেন এই ব্যাটার। এছাড়া বিরাট কোহলি অপরাজিত ছিলেন ১৯ রানে।
সামনে ছিল ৫১৩ রানের বিশ্বরেকর্ড লক্ষ্য। যেখানে টেস্ট ইতিহাসেই ৪১৮ রানের বেশি তাড়া করে জেতার রেকর্ড নেই, সেখানে বাংলাদেশ এই ম্যাচে অসাধ্য সাধন করে ফেলবে, এমন ভাবা বাড়াবাড়িই ছিল। তবে দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত আর জাকির হাসান উদ্বোধনী জুটিতে ১২৪ রান তুলে দেওয়ার পর আশায় বুক বেঁধেছিলেন সমর্থকরা। কিন্তু বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত স্বপ্ন ছুঁতে পারলো না। যেতে পারলো না কাছাকাছিও। চট্টগ্রাম টেস্টে সাকিব আল হাসানের দলকে ১৮৮ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে দেয় ভারত। বাংলাদেশের হয়ে ৬৭ রান করেন শান্ত। এছাড়া ২২৪ বল খেলে ১০০ রান করেন জাকির ও ৮৪ রান করেন সাকিব। শেষ পর্যন্ত ৩২৪ রানে থামে তাদের ইনিংস।
অক্ষর প্যাটেল ৭৭ রান খরচায় নেন ৪টি উইকেট। ৩ উইকেট শিকার প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া কুলদ্বীপ যাদবের।
বাংলাদেশ বনাম ভারত এর স্কোরবোর্ড
ভারত (১ম ইনিংস) – ৪০৪/১০ (১৩৩.৫)
বাংলাদেশ (১ম ইনিংস) – ১৫০/১০ (৫৫.৫)
ভারত (২য় ইনিংস) – ২৫৮/২ ডি (৬১.৪)
বাংলাদেশ (২য় ইনিংস) – ৩২৪/১০ (১১৩.২)
ফলাফল – ভারত ১৮৮ রানে জয়ী
প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ – কুলদীপ যাদব
বাংলাদেশ বনাম ভারত ম্যাচের একাদশ
বাংলাদেশ | সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), নুরুল হাসান (উইকেটরক্ষক), নাজমুল হোসেন শান্ত, জাকির হাসান, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, মেহেদি হাসান মিরাজ, ইয়াসির আলী, তাইজুল ইসলাম, এবাদত হোসেন, খালেদ আহমেদ। |
ভারত | কেএল রাহুল (অধিনায়ক), ঋষভ পান্ত (উইকেটরক্ষক), চেতেশ্বর পূজারা, শুভমান গিল, শ্রেয়াস আইয়ার, বিরাট কোহলি, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, অক্ষর প্যাটেল, উমেশ যাদব, কুলদীপ যাদব, মোহাম্মদ সিরাজ |