ইংল্যান্ড বনাম ভারত (৫ম টেস্ট – ৫ম দিন)
রীতিমত অবিশ্বাস সব কাণ্ডের জন্ম দিচ্ছে ইংল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেই দেখিয়েছে তারা। এবার ভারতকেও দেখালো। প্রথম ইনিংসে যে দলটি ২৮৪ রানে অলআউট হয়ে ১৩২ রানে পিছিয়ে ছিল, সেই দলটিই কি না দ্বিতীয় ইনিংসে (ম্যাচের চতুর্থ ইনিংস) ৩৭৮ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করে ৭ উইকেটের ব্যবধানে ম্যাচ জিতে গেলো!
জো রুট আর জনি বেয়ারেস্টোর ব্যাটে শেষ পর্যন্ত ইতিহাসটা গড়েই ফেললো ইংল্যান্ড। বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে ৩৭৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ঠিকই ইংল্যান্ডকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন এই দুই ব্যাটার। দু’জনই করেছেন সেঞ্চুরি। জনি বেয়ারেস্টো তো অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করে যাচ্ছেন। তিন টেস্টে এটা তার চতুর্থ সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারে ২৮তম সেঞ্চুরির দেখা পেয়ছেন জো রুট।
বিনা উইকেটে ১০৭ রান থেকে ১০৯ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে বসেছিল ইংল্যান্ড। চতুর্থ দিন বিকেলেই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে ফেলতে পারতো ভারতীয় বোলাররা। কিন্তু উল্টো সবাইকে চমকে দিয়ে ভাগ্যটা গড়ে নিয়েছিলেন জো রুট আর জনি বেয়ারেস্টো। ১৫০ রানের জুটি গড়ে অবিচ্ছিন্ন থাকেন তারা দু’জন।
পঞ্চম দিন সকালে ব্যাট করতে নেমে জসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামি, মোহাম্মদ সিরাজ কিংবা শার্দুল ঠাকুরদের বেশ কিছু দুর্দান্ত ডেলিভারির মুখোমুখি হতে হয়েছিল রুট-বেয়ারেস্টোকে। কিন্তু তারা ছিলেন অবিচল। লক্ষ্য পূরণ না করে কেউ বিচ্ছিন্ন না হওয়ার পণ করেই যেন মাঠে নেমেছিলেন তারা।
শেষ পর্যন্ত ভারতের তুমুল প্রতাপশালী পেস আক্রমণ ছিড় ধরাতে পারেনি রুট-বেয়ারেস্টোর জুটিতে। ২৬৯ রানের জুটিতে অবিচ্ছিন্ন থেকে ইংল্যান্ডকে ঐতিহাসিক জয়টি এনে দিলেন এই দুই ব্যাটার। ১৪৫ বলে ১১৪ রান করে বেয়ারেস্টো এবং ১৭৩ বলে ১৪২ রানে অপরাজিত থাকেন জো রুট।
অবিশ্বাস্য এই জয়ের সঙ্গে সিরিজও ২-২ ব্যবধানে ড্র করলো ইংলিশরা। গত বছর (২০২১ সালে) আইপিএলের দ্বিতীয় ভাগ আরব আমিরাতে শুরুর আগে ইংল্যান্ডে ৫ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের চারটি খেলেছিল ভারত। তাতে ২-১ ব্যবধানে এগিয়েই ছিল তখনকার বিরাট কোহলির নেতৃত্বাধীন দলটি।
এই টেস্ট ম্যাচটি নিশ্চিত জিতেই যাচ্ছিল জসপ্রিত বুমরাহর ভারত। প্রথম ইনিংসে রিশাভ পান্ত (১৪৫) এবং রবিন্দ্র জাদেজার (১০৪) দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের ওপর ভর করে ৪১৬ রানের ইনিংস গড়েছিল ভারত। জবাব দিতে নেমে ইংল্যান্ড পড়ে যায় দারুণ বিপদে। একের পর এক উইকেট পড়তে থাকে ভারতীয় পেসারদের আগুনে বোলিংয়ের সামনে।
কিন্তু ইংলিশদের ত্রাতা হয়ে আবির্ভূত হন জনি বেয়ারেস্টো। তার ১০৬ রানের ওপর ভর করে ইংল্যান্ড সংগ্রহ পায় ২৮৪ রানের। ১৩২ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে ভারত। চেতেশ্বর পুজারা (৬৬) আর রিশাভ পান্তের ব্যাটে (৫৭) ভর করে ২৪৫ রান তুলতে সক্ষম হয় সফরকারীরা।
সব মিলিয়ে ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে জয়ের জন্য ৩৭৮ রানের লক্ষ্য পায় ইংল্যান্ড। রীতিমত বিশাল লক্ষ্য। এতবড় রান তাড়াও করতে নামার আগে প্রতিটি দলেরই পিলে চমকে যাওয়ার কথা। কিন্তু ইংলিশরা যেন পণ করেই নামে, লক্ষ্য যত বড়ই হোক, তারা তাড়া করবেই।
দুই ওপেনার অ্যালেক্স লিস এবং জ্যাক ক্রাউলি মিলে সূচনাটা করেন দুর্দান্ত। ১০৭ রানের জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন তারা দু’জন। ক্রাউলি করেন ৪৬ রান। অ্যালেক্স লিস আউট হন ৫৬ রান করে। অলি পোপ কেবল কোনো রান করতে পারেননি। এরপরের গল্প তো সবারই জানা। বেয়ারেস্টো আর জো রুটের ব্যাটে ঠিকই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ড বনাম ভারত এর স্কোরবোর্ড
ভারত (১ম ইনিংস) – ৪১৬/১০ (৮৪.৫)
ইংল্যান্ড (১ম ইনিংস) – ২৮৪/১০ (৬১.৩)
ভারত (২য় ইনিংস) – ২৪৫/১০ (৮১.৫)
ইংল্যান্ড (২য় ইনিংস) – ৩৭৮/৩ (৭৬.৪)
ফলাফল – ইংল্যান্ড ৭ উইকেটে জয়ী
প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ – জনি বেয়ারস্টো
ইংল্যান্ড বনাম ভারত ম্যাচের একাদশ
ইংল্যান্ড | বেন স্টোকস (অধিনায়ক), স্যাম বিলিংস (উইকেটরক্ষক), জ্যাক ক্রাওলি, অ্যালেক্স লিস, জো রুট, অলি পোপ, ম্যাটি পটস, জনি বেয়ারস্টো, জ্যাক লিচ, স্টুয়ার্ট ব্রড, জেমস অ্যান্ডারসন |
ভারত | যশপ্রিত বুমরাহ (অধিনায়ক), ঋষভ পান্ত (উইকেটরক্ষক), চেতেশ্বর পূজারা, শুভমান গিল, বিরাট কোহলি, হনুমা বিহারী, রবীন্দ্র জাদেজা, শ্রেয়াস আইয়ার, মোহম্মদ শামি, শার্দুল ঠাকুর, মোহম্মদ সিরাজ |