অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ড (২য় ওডিআই) – হাইলাইটস
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২ জয়ের পর ওডিআই সিরিজ খেলতে নেমে রীতিমত নাকাল হলো বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার কাছে বড় হারের পর দ্বিতীয় ওডিআইতেও পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছে সফরকারীরা।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই ম্যাচে অবশ্য শুধু স্টিভেন স্মিথই জ্বলে ওঠেননি, দল হিসেবে পারফর্ম করে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। স্মিথ, মারনাস লাবুশেন, মিচেল মার্শের ফিফটির পর মিচেল স্টার্ক ও অ্যাডাম জাম্পার দারুন বোলিংয়ে টি-টোয়েন্টির বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ৭২ রানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ফলে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই তিন ম্যাচের ওডিআই সিরিজটি নিজেদের করে নিল অসিরা।
সিডনিতে শনিবার (১৯ নভেম্বর) প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৮০ রান সংগ্রহ করে স্বাগতিকরা। জবাব দিতে নেমে ৩৮.৫ ওভারে দুই অজি বোলার জাম্পা ও স্টার্কের বোলিং তোপে ২০৮ রানে থেমে যায় ইংলিশদের ইনিংস।
অ্যারন ফিঞ্চ অবসরে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার এটি দ্বিতীয় ওডিআই। আগের ম্যাচেই ওডিআই অধিনায়কত্বের মেয়াদ শুরু করা প্যাট কামিন্স এই ম্যাচে বিশ্রামে ছিলেন। তাঁর জায়গায় অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কত্ব করেছেন আরেক পেসার জস হ্যাজলউড। বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল ইংল্যান্ডের নিয়মিত অধিনায়ক জস বাটলারকেও। ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সহ-অধিনায়ক মঈন আলী।
টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে আগের ওডিআইতে অর্ধশতক করা দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার (১৬) ও ট্রাভিস হেড (১৯) ইনিংস বড় করতে পারেননি। প্রথম ১০ ওভারের মধ্যেই দুই ওপেনারের বিদায়ের পর ইনিংসের হাল ধরেন স্মিথ ও লাবুশেন। এই দুজন মিলে ১০১ রানের জুটি গড়ে তোলেন। তবে দুজনই আদিল রশিদের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরেন।
এই নিয়ে ওডিআই ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ছয়বার রশিদের শিকার হলেন স্মিথ। ১১৪ বল মোকাবিলায় ৯৪ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। তার ইনিংসটি ৫ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো ছিল। এছাড়া লাবুশেন ৪ চার ও ১ ছয়ের সাহায্যে ৫৫ বলে ৫৮ রান করেন। স্মিথ ও লাবুশেন ছাড়া অর্ধশতকের দেখা পান মিচেল মার্শও। তিনি সমান ২ চার ও ছয়ের মারে ৫৯ বলে ৫০ রানের ইনিংস খেলেন।
শেষদিকে অ্যাশটন অ্যাগারের ১২ বলে ১৮ রানের ক্যামিও ইনিংসের উপর ভর করেই ২৮০ রানের লড়াকু পুঁজি পায় অস্ট্রেলিয়া। ইংলিশদের হয়ে আদিল রশিদ সর্বাধিক ৩টি উইকেট তুলে নেন। এছাড়া ক্রিস ওকস ও ডেভিড উইলি ২টি করে এবং মঈন আলী ১টি উইকেট শিকার করেন।
২৮১ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই মিচেল স্টার্কের তোপের মুখে পড়ে ইংল্যান্ড। চূড়ান্ত বাজে ফর্মে থাকা জেসন রয়ও ফেরেন শূন্য হাতে। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা ডেভিড মালানকেও রানের খাতা খোলার আগেই ফিরতে হয়েছে স্টার্কের অসাধারণ এক ডেলিভারিতে। এরপর দলীয় ৩৪ রানে ফিল সল্টকে (২৩) হারিয়ে আরও চাপে পড়ে সফরকারীরা।
স্টার্ক ঝড় সামলে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ইংল্যান্ড। সে কাজটা করেছেন জেমস ভিন্স ও স্যাম বিলিংস। চতুর্থ উইকেট এদুজন মিলে ১২২ রানের জুটি গড়ে তোলেন। তাতে চাপ সামলে জয়ের পথেই হাটতে থাকে ইংলিশরা। জয়ের জন্য ১৩৩ বলে তখনও তাদের প্রয়োজন ছিল ১২৫ রান। কিন্তু ক্রিজে থিতু হওয়া ভিন্সকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে প্যাভিলিয়নে ফেরান হ্যাজলউড। তিনি ৩ চার ও ২ ছক্কায়, ৭২ বলে ৬০ রান করেন।
এরপর জাম্পা জ্বলে উঠলে সেখানেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় ইংল্যান্ড। ৩ উইকেটে ১৫৬ রান করা ইংল্যান্ড ১৬৯ রানে হারায় ৭ উইকেট। জাম্পা এসে একে একে সাজঘরে ফেরান মঈন (১০), বিলিংস, স্যাম কুরান (০) ও লিয়াম ডসনকে (২০)। বিলিংস ৩ চার ও ২ ছক্কায়, ৮০ বলে ৭১ রান করেন। বাকিরা কেউ ক্রিজে স্থায়ী হতে পারেননি। স্টার্ক এসে তুলে নেন ওকস (৭) ও উইলির (৬) উইকেট। তাতে ২০৮ রানেই থেমে যায় ইংলিশদের ইনিংস।
অসিদের হয়ে মিচেল স্টার্ক এবং অ্যাডাম জাম্পা দুজনেই সর্বোচ্চ চারটি করে উইকেট শিকার করেন। এছাড়া জশ হ্যাজলউড ২টি উইকেট পেয়েছেন। দুর্দান্ত বোলিং করে প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন মিচেল স্টার্ক। আগামী ২২ নভেম্বর (মঙ্গলবার) মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সিরিজের শেষ ম্যাচে এই দুই দল মুখোমুখি হবে।
অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ড এর স্কোরবোর্ড
অস্ট্রেলিয়া – ২৮০/৮ (৫০.০)
ইংল্যান্ড – ২০৮/১০ (৩৮.৫)
ফলাফল – অস্ট্রেলিয়া ৭২ রানে জয়ী
প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ – মিচেল স্টার্ক
অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচের একাদশ
অস্ট্রেলিয়া | জশ হ্যাজলউড (অধিনায়ক), অ্যালেক্স ক্যারি (উইকেট রক্ষক), ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথ, ট্রাভিস হেড, মারনাস লাবুশেন, মিচেল মার্শ, অ্যাশটন অ্যাগার, মার্কাস স্টয়নিস, মিচেল স্টার্ক এবং অ্যাডাম জাম্পা। |
ইংল্যান্ড | মঈন আলী (অধিনায়ক), স্যাম বিলিংস (উইকেট রক্ষক), জেসন রয়, ডেভিড মালান, ফিলিপ সল্ট, জেমস ভিন্স, ক্রিস ওকস, লিয়াম ডসন, স্যাম কুরান, ডেভিড উইলি এবং আদিল রশিদ। |