
ইতিহাসের একটা অদ্ভুত স্বভাব আছে, সে নাকি বারবার ফিরে আসে। কিন্তু সুদূর পশ্চিম রয়্যালস (Sudur Paschim Royals) এবার পণ করেছে, তারা পুরনো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি নয়, বরং নতুন ইতিহাস লিখবে। নেপাল প্রিমিয়ার লিগ (NPL)-এর মঞ্চে এই নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো গ্র্যান্ড ফাইনালে পা রাখল রয়্যালসরা। গত মৌসুমের ফাইনালে ট্রফিটা “এত কাছে তবুও কত দূরে”, এই আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল তাদের। সাধারণত এমন হৃদয়বিদারক হারের পর অনেক দলই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে, কিন্তু রয়্যালসরা ফিরেছে সিনেমার নায়কের মতো দ্বিগুণ তেজ নিয়ে। তারা কেবল ইতিহাসের দরজায় কড়া নাড়ছে না, বরং বুটের লাথিতে দরজাটা ভেঙে ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে তারা যে দাপট দেখিয়েছে, তাতে এখন প্রশ্ন এটা নয় যে তারা জিতবে কি না; বরং প্রশ্ন হলো তাদের থামানোর ব্লু-প্রিন্ট কি প্রতিপক্ষের কাছে আদৌ আছে?
লিগ পর্বের দাপট থেকে নকআউটের নির্মমতা
পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায়, রয়্যালসরা নেপাল প্রিমিয়ার লিগ ২০২৫-এ কেবল অংশগ্রহণ করেনি, বরং পুরো লিগটাকে শাসন করেছে। সাতটি ম্যাচের মধ্যে ছয়টিতেই জয় এবং পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে লিগ শেষ করা, এগুলো কেবল সংখ্যা নয়, তাদের শক্তির প্রমাণ। তবে তাদের জয়ের ধরণটাই প্রতিপক্ষের মেরুদণ্ডে ভয়ের স্রোত নামিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আমরা কোনো কষ্টার্জিত বা শেষ বলের নাটকীয় জয় দেখিনি; দেখেছি একপেশে আধিপত্য। যেমন চিতবন রাইনোজের বিরুদ্ধে ৪৯ রানের জয় কিংবা কোয়ালিফায়ার-১ এ বিরাটনগর কিংসকে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া।
কোয়ালিফায়ারের মতো হাই-প্রেশার ম্যাচে প্রতিপক্ষকে মাত্র ৭৮ রানে গুটিয়ে দেওয়াটা কোনো ভাগ্যের ব্যাপার নয়, এটা হলো স্টেটমেন্ট। সরাসরি ফাইনালে জায়গা করে নিয়ে তারা টুর্নামেন্টের সবচেয়ে দামী জিনিসটি অর্জন করেছে, আর তা হলো ‘বিশ্রাম’। যখন তাদের প্রতিপক্ষকে ডু-অর-ডাই কোয়ালিফায়ার-২ খেলে ক্লান্ত হতে হচ্ছে, তখন রয়্যালসরা নিজেদের রিচার্জ করে নিচ্ছে। শিরোপা উঁচিয়ে ধরা আর রানার্স-আপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকার মধ্যে এই শারীরিক ও মানসিক সতেজতাটাই অনেক সময় বড় ব্যবধান গড়ে দেয়।
বিধ্বংসী ব্যাটিং ও কৌশলী বোলিংয়ের নিখুঁত রসায়ন
ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে অনেক দলই অতিমাত্রায় এক বা দুইজন সুপারস্টারের ওপর নির্ভরশীল থাকে, কিন্তু সুদূর পশ্চিম রয়্যালস দল গঠনের ক্ষেত্রে যেন সার্জিক্যাল প্রিসিশন দেখিয়েছে। টপ অর্ডারে ক্রিস লিন এবং বিনোদ ভান্ডারির মতো “ব্যাশ-ব্রাদার্স”-এর উপস্থিতি প্রতিপক্ষের বোলারদের ঘুম হারাম করার জন্য যথেষ্ট। কোয়ালিফায়ারে ভান্ডারির হাফ-সেঞ্চুরিটা ছিল চাপের মুখে কীভাবে ব্যাট করতে হয় তার এক দুর্দান্ত উদাহরণ।
তবে প্রচলিত কথা আছে, “ব্যাটসম্যানরা ম্যাচ জেতায়, আর বোলাররা টুর্নামেন্ট জেতায়।” রয়্যালসদের বোলিং অ্যাটাক ঠিক তেমনই। অবিনাশ বোহরার গতি আর হারমিত সিংয়ের স্পিন ভেলকি মিলে ব্যাটসম্যানদের জন্য এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি করে। এর সাথে স্কট কুগলেজিয়েনের মতো অলরাউন্ডার যখন দুই বিভাগেই পারফর্ম করেন, তখন অধিনায়ক দীপেন্দ্র সিং আইরি দল সাজাতে বাড়তি সুবিধা পান। এটি কেবল কিছু ভালো খেলোয়াড়ের সমষ্টি নয়, বরং পিচ এবং কন্ডিশন অনুযায়ী দ্রুত খাপ খাইয়ে নেওয়া এক সুশৃঙ্খল মেশিন।
বিশ্রাম এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বের স্ট্র্যাটেজিক সুবিধা

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এই ঝড়ের মাঝে অধিনায়ক দীপেন্দ্র সিং আইরি যেন এক শান্ত নাবিক। ব্যাট ও বল হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া এবং দলের মধ্যে স্থিরতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তার জুড়ি মেলা ভার। তবে মাঠের লড়াই জেতার জন্য কেবল ট্যাকটিকস নয়, দরকার হয় একটি ‘এক্সিলেন্স কালচার’ বা শ্রেষ্ঠত্বের সংস্কৃতি। এই মৌসুমে রয়্যালসের এই যাত্রার স্পন্সর বিজে স্পোর্টস (BJ Sports), যারা দলের মতোই এলিট পারফরম্যান্স এবং প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের ভিশন শেয়ার করে।
মাঠের বাইরে এই শক্ত সমর্থন যে দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে, তা তাদের “নেভার-সে-ডাই” বা হার না মানা মানসিকতা দেখলেই বোঝা যায়। আগামী শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ফাইনাল নিয়ে উত্তেজনার পারদ এখন তুঙ্গে। সারা বিশ্বের ক্রিকেট ফ্যানরা Sportslivehub-এ লাইভস্ট্রিমিং -এর মাধ্যমে চোখ রাখবে পর্দায়, দেখার জন্য যে রয়্যালসরা গতবারের আক্ষেপ ঘোচাতে পারে কি না। তাদের মোমেন্টাম এখন তুঙ্গে, আর ট্রফি জয়ের ক্ষুধাটা প্রতিটি ম্যাচে স্পষ্ট।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)
১. এনপিএল ২০২৫–এর ফাইনাল ম্যাচটি কবে অনুষ্ঠিত হবে?
গ্র্যান্ড ফিনালেটি আগামী শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে।
২. সুদূর পশ্চিম রয়্যালস কীভাবে ফাইনালে পৌঁছাল?
তারা লিগ পর্বে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ছিল এবং কোয়ালিফায়ার-১ এ বিরাটনগর কিংসকে ৭৭ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে সরাসরি ফাইনালে জায়গা করে নেয়।
৩. রয়্যালসদের কোন কোন খেলোয়াড়ের দিকে নজর রাখতে হবে?
অধিনায়ক দীপেন্দ্র সিং আইরি, ওপেনার ক্রিস লিন এবং পেসার অবিনাশ বোহরার দিকে বিশেষ নজর থাকবে।
ডিসক্লেইমার: এই আজকের ট্রেন্ডিং (ব্লগ) কেবল লেখকের ব্যক্তিগত মতামত ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে। আলোচিত বিষয়গুলো ভেবে দেখুন, বিশ্লেষণ করুন, আর নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিন।
অন্য সব স্পিনার ছেড়ে হোবার্ট হারিকেনস কেন রিশাদ হোসেনকেই বেছে নিল?
সাকিবের অবসরে নাটকীয় মোড়: শেষ ম্যাচ কি তবে এখনো বাকি?
বিপিএল ২০২৬: ফাইনালে ওঠার দৌড়ে নোয়াখালী এক্সপ্রেস আসলে কতটুকু এগিয়ে
বিপিএল ২০২৬: মৌসুম শুরুর আগেই জেনে নিন কেমন হলো সব দলের একাদশ

