
২০২৫ বিপিএলের নিলাম শেষে একটা বিষয় পরিষ্কার, এবারের আসরটি অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে আলাদা হতে যাচ্ছে। যেখানে বিদেশি তারকাদের পেছনে টাকার বস্তা নিয়ে ছোটাটাই রেওয়াজ ছিল,
সেখানে এবার একজন তরুণ বাংলাদেশি ওপেনারের একমাত্র ‘কোটিপতি’ হওয়ার ঘটনা বিপিএলের মানসিকতা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এবারের নিলাম ছিল সাহসী জুয়া এবং সতর্ক কৌশলের এক দারুণ সংমিশ্রণ। দলগুলো বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা ২০২৬ সালের কথা মাথায় রেখেই দল সাজাচ্ছে।
সবচেয়ে বড় কথা, এবারের নিলাম প্রমাণ করেছে যে আন্তর্জাতিক চাকচিক্যের চেয়ে দেশীয় প্রতিভার কদর এখন অনেক বেশি। আর সেই সাথে এবার Sportslivehub এ লাইভ স্ট্রিমিং সুবিধা থাকায় মৌসুমের শুরু থেকেই দর্শকদের আগ্রহ তুঙ্গে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নাঈমের কোটি টাকার চমক: দেশি ভ্যালুয়েশনের নতুন অধ্যায়
মোহাম্মদ নাঈম শেখের ১ কোটি ১০ লাখ টাকার ল্যান্ডমার্ক স্পর্শ করাটা কেবল নিলামের সবচেয়ে বড় চেক বা অংক ছিল না, এটি ছিল একটি স্টেটমেন্ট। চট্টগ্রাম রয়্যালস শুধু একজন বাঁহাতি ওপেনার কেনেনি, তারা একটি সুনির্দিষ্ট ব্যাটিং দর্শনে বিনিয়োগ করেছে। নাঈমের প্রতিভার ঝলক আমরা আগেও দেখেছি, কিন্তু ঘরোয়া লিগে তার সাম্প্রতিক ফর্ম তাকে এবারের নিলামের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ‘লং-টার্ম বেট’ বা দীর্ঘমেয়াদী বাজি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। রয়্যালস তাকে এমন একজন পাওয়ারপ্লে অ্যাঙ্কর হিসেবে দেখছে, যিনি অযথা ঝুঁকি না নিয়ে শুরুতেই দলের মোমেন্টাম সেট করে দিতে পারেন। তার এই চড়া দাম একটা বিষয় পরিষ্কার করে দিল, বিপিএল দলগুলো এখন আর ভিনদেশি হার্ড-হিটারদের ওপর ভরসা না করে ঘরের ছেলের ব্যাটে টপ অর্ডারের স্থায়িত্ব খুঁজছে এবং তার জন্য প্রিমিয়াম প্রাইস দিতেও তারা প্রস্তুত।
রংপুরের ডাবল স্ট্রাইক: মিডল অর্ডারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ
তাওহীদ হৃদয় (৯২ লাখ টাকা) এবং লিটন দাস (৭০ লাখ টাকা), এই দুজন কেবল চড়া দামের ব্যাটার নন, তারা রংপুর রাইডার্সের জন্য ‘স্ট্র্যাটেজিক ইন্স্যুরেন্স’ বা কৌশলগত সুরক্ষা কবচ। রংপুর তাদের মিডল অর্ডার সাজিয়েছে শুধু তারকা খ্যাতি দিয়ে নয়, বরং পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা বা ‘অ্যাডাপ্টেবিলিটি’ দিয়ে। হৃদয়ের আছে বয়সের তুলনায় পরিপক্বতা এবং রেঞ্জ হিটিংয়ের ক্ষমতা। অন্যদিকে লিটন দাস মানেই অনিশ্চয়তা, কিন্তু তার দিনে তিনি একাই চার ওভারে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। এই দুজনের জুটি রংপুরকে যেমন রানের গতি বাড়ানোর সুযোগ দেবে, তেমনি উইকেট পড়লে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার অপশনও খোলা রাখবে। বিদেশি ব্যাটারদের ওপর নির্ভর না করে ক্রাঞ্চ মোমেন্টে দেশিদের ওপর এই আস্থা, দল গঠনের পরিকল্পনায় এক সতেজ পরিবর্তন।
ঢাকার অলরাউন্ডার প্রীতি: ভারসাম্যই যখন মূলমন্ত্র
ঢাকা ক্যাপিটালস ৬৮ লাখ টাকায় মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে দলে ভিড়িয়েছে এবং বিদেশি ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ ৫৫,০০০ ডলারে কিনেছে দাসুন শানাকাকে। তাদের কৌশলটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার, ঢাকা প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে গভীরতা বা ‘ডেপথ’ চায়। সাইফউদ্দিন দলে নিয়ে আসছেন সেই বিরল বাংলাদেশি সক্ষমতা, ডেথ ওভারে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সাথে কার্যকরী ব্যাটিং। ১৮ থেকে ২০তম ওভারে বল হাতে ভরসা দেওয়ার মতো হাতেগোনা কয়েকজন দেশি পেসারের মধ্যে তিনি অন্যতম। অন্যদিকে, শানাকা যোগ করছেন তার নেতৃত্বগুণ, ফিনিশিং দক্ষতা এবং চাপের মুখে শান্ত থাকার ক্ষমতা। সব মিলিয়ে, ঢাকা তাদের অলরাউন্ডারদের ওপরই বাজি ধরেছে গেমের পেস বা গতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, স্রোতে গা ভাসানোর জন্য নয়।
রাজশাহীর তারুণ্য নির্ভর পেস আক্রমণ
তানজিম হাসান সাকিবের পেছনে ৬৫ লাখ টাকা খরচ করে রাজশাহী ওয়ারিয়র্স বুঝিয়ে দিয়েছে, সাহসিকতা দেখাতে তারা পিছপা হবে না। সাধারণত বিপিএল দলগুলো বিদেশি বোলারদের মধ্যে যের ‘স্পিড’ বা গতি এবং আগ্রাসন খোঁজে, রাজশাহী সেটা পেয়েছে দেশি সাকিবের মধ্যেই। পাওয়ারপ্লেতে তিনি নিজেকে ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছেন। তবে তাকে এত চড়া দামে কেনার অর্থ হলো, রাজশাহী তাকে কেবল প্রথম ৬ ওভার নয়, বরং পুরো পেস অ্যাটাকের লিডার হিসেবেই দেখছে। এই মৌসুমটি হতে পারে সাকিবের জন্য “প্রতিভাবান তরুণ” থেকে “আক্রমণভাগের নেতা” হয়ে ওঠার মঞ্চ।
২০২৫ বিপিএল নিলামে কেবল খেলোয়াড় অদলবদল হয়নি, বরং ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর নিজেদের ব্র্যান্ডিং এবং চিন্তাধারায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। চট্টগ্রাম ঘরের ছেলের ওপর বাজি ধরেছে, রংপুর দেশি ব্যাটারদের ওপর ভিত্তি করে দল সাজিয়েছে, ঢাকা অলরাউন্ডার-হেভি স্কোয়াড গড়েছে আর রাজশাহী ভবিষ্যৎ তারকার ওপর বিনিয়োগ করেছে। সবচেয়ে আশার কথা হলো দলগুলোর এই পরিপক্বতা চটকদার বিদেশি আমদানির চেয়ে দেশি কোরের ওপর বড় অংক খরচ করার মানসিকতা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যই এক শুভ ইঙ্গিত।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)
১. মোহাম্মদ নাঈম কেন সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া খেলোয়াড় হলেন?
তার সাম্প্রতিক দুর্দান্ত ফর্ম, পাওয়ারপ্লেতে ধারাবাহিকতা এবং দেশীয় ওপেনার হিসেবে দীর্ঘমেয়াদী ভ্যালুর কারণেই তার দাম ১ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
২. ঢাকা কেন অলরাউন্ডারদের পেছনে এত টাকা খরচ করল?
তারা এমন একটি স্কোয়াড গড়তে চেয়েছে যেখানে ব্যাটিং-বোলিং সব বিভাগেই একাধিক অপশন থাকে। মাল্টি-ফেজ কন্ট্রিবিউটর বা সব পরিস্থিতিতে খেলতে পারা অলরাউন্ডাররা কঠিন ম্যাচে তাদের বাড়তি নিয়ন্ত্রণ দেবে।
৩. রংপুর তাদের ব্যাটিং লাইনআপ কীভাবে শক্তিশালী করল?
তাওহীদ হৃদয় এবং লিটন দাসকে দলে নিয়ে তারা একটি ভার্সেটাইল বা বহুমুখী শক্তিশালী দেশি মিডল অর্ডার নিশ্চিত করেছে, যারা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম।
ডিসক্লেইমার: এই আজকের ট্রেন্ডিং (ব্লগ) কেবল লেখকের ব্যক্তিগত মতামত ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে। আলোচিত বিষয়গুলো ভেবে দেখুন, বিশ্লেষণ করুন, আর নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিন।
বিপিএল ২০২৫-এর সর্বোচ্চ রান: এই সিজনের সেরা ৫ ব্যাটসম্যান কারা?
বিপিএল ২০২৫-এর সেরা ৫ উইকেট শিকারি: এই পাঁচ বোলার যেভাবে গড়েছেন জয়ের ভিত
পিএসএল ২০২৬-এর টিকিট বুকিং গাইড: দাম, ভেন্যু ও সিটিং ক্যাটাগরি – সব জেনে নিন এখনই
বিগ ব্যাশ লিগ ২০২৫-এর সর্বোচ্চ বেতনভুক্ত ক্রিকেটাররা: পূর্ণ বেতন তালিকা, শীর্ষ আয়কারী ও দলগুলোর বাজেট

