
আবুধাবিতে হাতুড়ির বাড়ি পড়তেই আমাদের সবার চোখ যেন কপালে উঠল! আমরা ভেবেছিলাম মিচেল স্টার্কের আগের রেকর্ডটাই হয়তো আইপিএল নিলামের শেষ কথা, কিন্তু আইপিএল ২০২৬– এর মিনি নিলাম বুঝিয়ে দিল ফ্র্যাঞ্চাইজিদের পকেটের আসলে কোনো তলা নেই। এটা শুধু সাধারণ মুদ্রাস্ফীতি নয়, এ যেন ক্রিকেটের বাজারে এক ভূমিকম্প, যেখানে আনক্যাপড ভারতীয় প্লেয়াররাও এখন আন্তর্জাতিক অধিনায়কদের সমান পারিশ্রমিক পাচ্ছেন।
আপনি যদি Sportslivehub-এ লাইভস্ট্রিমিং মিস করে থাকেন, তবে চিন্তা নেই, পরিসংখ্যানগুলোই আপনাকে পুরো গল্পটা বলে দেবে। নিলামের ঘরটা শেষ পর্যন্ত একটা যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) এবং চেন্নাই সুপার কিংস (CSK), দুই দলের কৌশল ছিল দুই মেরুর, কিন্তু খরচের বহরে কেউ পিছিয়ে ছিল না। ১০টি ফ্র্যাঞ্চাইজি মিলে মাত্র ৭৭ জন প্লেয়ারের জন্য খরচ করেছে মোট ২১৫.৪৫ কোটি টাকা! একটা কথা পরিষ্কার, জয়ের দাম এখন আকাশছোঁয়া।
ক্যামেরন গ্রিন কেকেআর ২৫ কোটি

২৫.২০ কোটি টাকায় ক্যামেরন গ্রিন! এটা শুধু একটা কেনাকাটা নয়, এটা কেকেআর-এর এক হুঙ্কার। অজি এই দৈত্যাকৃতি অলরাউন্ডারকে আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে দামি বিদেশি প্লেয়ার বানিয়ে কেকেআর বুঝিয়ে দিল, বাজেটের তোয়াক্কা তারা করে না। ছোট কোনো দ্বীপরাষ্ট্রের জিডিপির সমান এই টাকা কি গ্রিনের প্রাপ্য? কেকেআর ম্যানেজমেন্ট কিন্তু তাই মনে করে। আন্দ্রে রাসেল একসময় যে ইমপ্যাক্ট ফেলতেন, তার যোগ্য উত্তরসূরি খুঁজতেই এই মরিয়া চেষ্টা। ইডেন গার্ডেন্সের পিচে পেস, বাউন্স আর ক্লিন হিটিং, এই তিনটি জিনিসের সঙ্গে গ্রিন দারুণ মানানসই। টপ অর্ডারে ব্যাট করা আর ৪ ওভার বোলিংয়ের ক্ষমতা, আধুনিক টি-২০ ক্রিকেটে এমন প্যাকেজ পাওয়া সত্যিই কঠিন।
মাথিশা পাথিরানা কেকেআর ১৮ কোটি

গ্রিন যদি ‘মেইন কোর্স’ হন, তবে মাথিশা পাথিরানা হলেন ১৮ কোটি টাকার ঝাল মশলাদার ‘সাইড ডিশ’! কেকেআর-এর পরিকল্পনা একদম স্বচ্ছ: তাদের দুই সেরা বোলার মিলে বিপক্ষের জন্য ৮ ওভারের এক বিভীষিকা তৈরি করবে। পাথিরানার স্লিং অ্যাকশন ডেথ ওভারে সোনার খনি, আর কলকাতা বুঝিয়ে দিয়েছে বাজেটের চিন্তা অন্য দলগুলোর জন্য, তাদের জন্য নয়। ১৮ কোটি টাকা একজন স্পেশালিস্ট বোলারের পেছনে খরচ করা প্রমাণ করে গেমটা কতটা বদলে গেছে। এখন দলগুলো শুধু রানের জন্য টাকা ঢালে না, তারা ডট বল কেনার জন্যও প্রিমিয়াম প্রাইস দিতে রাজি। ইডেনের ফ্লাডলাইটের নিচে পাথিরানার ইয়র্কার বিপক্ষ ব্যাটারদের রাতের ঘুম কাড়তে বাধ্য।
প্রশান্ত বীর সিএসকে ১৪ কোটি

গল্পের আসল টুইস্ট কিন্তু এখানেই। প্রশান্ত বীর, যাকে ১৪.২০ কোটি টাকায় কিনেছে চেন্নাই সুপার কিংস। নামটা শুনে হয়তো অনেক ফ্যান গুগলে সার্চ করতে শুরু করেছিলেন। আনক্যাপড প্লেয়ার হিসেবে এটি একটি নতুন বিশ্বরেকর্ড। কেকেআর যখন টিভি সুপারস্টার কিনছে, সিএসকে তখন কিনছে ‘সম্ভাবনা’। এটাই হলুদ জার্সির চিরন্তন ফিলোসফি, তারকাখ্যাতি নয়, স্কাউটদের ওপর ভরসা রাখো। তবে একজন ঘরোয়া ক্রিকেটারের পেছনে এত টাকা ঢালা প্রমাণ করে তাদের স্কাউটিং নেটওয়ার্কের কনফিডেন্স কোন পর্যায়ে। আন্তর্জাতিক ভেটেরানদের চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হওয়া প্রশান্ত নিশ্চয়ই ঘরোয়া সার্কিটে এমন কিছু দেখিয়েছেন যা সাধারণের চোখে পড়েনি।
কার্তিক শর্মা সিএসকে ১৪ কোটি

চেন্নাইয়ের চমক এখানেই শেষ নয়। প্রশান্তের ঠিক পরেই তারা ১৪.২০ কোটি টাকায় দলে ভিরিয়েছে আরেক আনক্যাপড প্রতিভা কার্তিক শর্মাকে। একই রেকর্ড দামে দুই তরুণ তুর্কিকে দলে নিয়ে সিএসকে বুঝিয়ে দিল, তারা তারকাখ্যাতির চেয়ে ‘ভবিষ্যৎ’-এর ওপর বিনিয়োগ করতে বেশি আগ্রহী। শর্মা তার লড়াকু মানসিকতা এবং পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতার জন্য পরিচিত, যে গুণগুলো ধোনির দলে সবচেয়ে বেশি কদর পায়। এরা কি আগামীর মহাতারকা, নাকি নিলামের উত্তেজনায় নেওয়া ভুল সিদ্ধান্ত? উত্তর সময়ই দেবে, তবে চিপকে অচেনা নামগুলোই কিন্তু কিংবদন্তি হয়ে ওঠার ইতিহাস রাখে।
লিয়াম লিভিংস্টোন হায়দ্রাবাদের ১৩ কোটি

বাজার যখন এত চড়া, তখন ১৩ কোটিতে লিয়াম লিভিংস্টোনকে পাওয়া সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের জন্য এক প্রকার ‘লটারি জেতা’র মতো। যখন সবাই সেরা চারের জন্য মারামারি করছিল, তখন এসআরএইচ চুপিচুপি বিশ্বের অন্যতম সেরা হার্ড-হিটারকে তুলে নিল। লিভিংস্টোন তাদের মিডল অর্ডারের বারুদ, যিনি প্রতিপক্ষ অধিনায়কদের দুঃস্বপ্ন হতে পারেন। অফ-স্পিন এবং লেগ-স্পিন, দুটোই করতে পারার ক্ষমতা তাকে দলের ভারসাম্য রক্ষায় অপরিহার্য করে তোলে। রেকর্ড ভাঙার এই পাগলাটে নিলামে, লিভিংস্টোনকে কেনাটাই সম্ভবত সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত ছিল।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন (FAQs)
১. ২০২৬ নিলামের পর আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে দামি প্লেয়ার কে?
ক্যামেরন গ্রিন এখন আইপিএলের সবচেয়ে দামি বিদেশি প্লেয়ার, যাকে কেকেআর ২৫.২০ কোটি টাকায় কিনেছে।
২. কোন আনক্যাপড প্লেয়াররা আইপিএল ২০২৬ নিলামে ইতিহাস গড়েছেন?
প্রশান্ত বীর এবং কার্তিক শর্মা যৌথভাবে ইতিহাসের সবচেয়ে দামি আনক্যাপড প্লেয়ার হয়েছেন (উভয়েই ১৪.২০ কোটি টাকায় সিএসকে-তে)।
৩. এই নিলামে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা মোট কত টাকা খরচ করেছে?
১০টি ফ্র্যাঞ্চাইজি মিলে ৭৭টি স্লট পূরণের জন্য মোট ২১৫.৪৫ কোটি টাকা খরচ করেছে।
ডিসক্লেইমার: এই আজকের ট্রেন্ডিং (ব্লগ) কেবল লেখকের ব্যক্তিগত মতামত ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে। আলোচিত বিষয়গুলো ভেবে দেখুন, বিশ্লেষণ করুন, আর নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিন।
কিং কোহলি আসলে কত টাকার মালিক? ২০২৫ সালে বিরাট কোহলির মোট সম্পদ আর ব্র্যান্ড ভ্যালুর চমকপ্রদ তথ্য
২০২৫ সালে ট্রাভিস হেড এর মোট সম্পত্তি: বেতন, আইপিএল আয় এবং সম্পদের বিস্তারিত হিসাব
বিবিএল ২০২৫: দ্রুততম লাইভ স্কোর ও প্লেয়ার ম্যাচ-আপ ডেটার জন্য সেরা প্ল্যাটফর্ম কোনটি
BJ Sports কীভাবে এনপিএল ম্যাচের ভবিষ্যদ্বাণীতে ৯৫% সাফল্য পেলো?

