
গত দুই বছরে যারা নিয়মিত ক্রিকেট দেখেছেন, তারা চিত্রটা খুব ভালোভাবেই চেনেন, ট্রাভিস হেড মাঠে নামেন, গোঁফে আলতো করে তা দেন, আর প্রথম দশ ওভারেই প্রতিপক্ষের মনোবল একেবারে গুঁড়িয়ে দেন। তবে এই বাঁহাতি ডায়নামো শুধু রানই তুলছেন না, পাল্লা দিয়ে বাড়াচ্ছেন নিজের ব্যাংক ব্যালেন্সও। ২০২৫ সাল পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, এই “বাইসন” এর আনুমানিক নেট ওয়ার্থ বা মোট সম্পত্তি প্রায় ৩.৫-৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২৪-৩০ কোটি টাকা)। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে যিনি সুযোগের জন্য লড়াই করতেন, আজ তিনি এক আর্থিক পরাশক্তি। ভয়ডরহীন স্ট্রোক-প্লে এবং আইসিসি ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে জ্বলে ওঠার ক্ষমতাই তাকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে।
আইপিএল বাজারে হেডের আকাশছোঁয়া দর
আইপিএল মার্কেট বড়ই নির্মম; এখানে পারফরম্যান্সের চেয়ে অনেক সময় হাইপ বেশি বিক্রি হয়। তবে ট্রাভিস হেড এই মার্কেটকে বাধ্য করেছেন তাকে নতুন করে মূল্যায়ন করতে। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ (SRH) তাকে ২০২৫ মৌসুমের জন্য ১৪ কোটি রুপিতে (প্রায় ১.৭ মিলিয়ন ডলার) রিটেইন করেছে। বিষয়টা কতটা বিশাল বুঝতেই পারছেন? ২০২৪ সালে তার বেতন ছিল ৬.৮০ কোটি রুপি, যা এক বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে!
বাজারদরের এই উল্লম্ফন মোটেও কাকতালীয় নয়, বরং এটি একটি বড়সড় ‘মার্কেট কারেকশন’। ভাবলে হাসি পায়, আরসিবি (RCB) একসময় তাকে মাত্র ৫০ লাখে দলে নিয়েছিল! কিন্তু দৃশ্যপট এখন বদলে গেছে। হেড এখন আর নিছক টপ-অর্ডার ব্যাটার নন, তিনি হলেন বোলারদের ত্রাস। বিশ্বজুড়ে ভক্তরা যখন তার ছক্কাগুলো দেখার জন্য Sportslivehub এ লাইভ স্ট্রিমিং-এ চোখ রাখেন, হায়দ্রাবাদ ফ্র্যাঞ্চাইজি তখন নিশ্চিত করে যে এই ‘আতশবাজি’ যেন কেবল তাদের অরেঞ্জ জার্সিতেই দেখা যায়। একেই বলে সাপ্লাই অ্যান্ড ডিমান্ডের খেলা, ট্রাভিস হেড একজনই, আর তাকে ধরে রাখতে হায়দ্রাবাদ খুশিমনেই এই চড়া দাম বা ‘চাওস ট্যাক্স’ গুণছে।
জাতীয় দলের মেরুদণ্ড ও আর্থিক সুরক্ষা
ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের চেকগুলো চটকদার হলেও, হেডের আয়ের মূল ভিত্তি কিন্তু ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (CA)। তিন ফরম্যাটেই তিনি এখন দলের অপরিহার্য অংশ, আর অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে তিন ফরম্যাটের খেলোয়াড় হওয়া মানেই সোনার খনি হাতে পাওয়া। রিপোর্ট অনুযায়ী, বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকেই তিনি বছরে প্রায় ৯ লাখ ৫১ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ৮.১৩ কোটি রুপি) আয় করেন।
বড় ম্যাচের বড় খেলোয়াড়ের ডিভিডেন্ড
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এই কেন্দ্রীয় চুক্তিটি হেডের আয়ের স্থিতিশীলতা বা ‘ফিন্যান্সিয়াল কিল’ হিসেবে কাজ করে। এটি তাকে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের অনিশ্চয়তা থেকে রক্ষা করে। এটি কেবল বেতন নয়, বরং টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতানোর পুরস্কার। হেড এখন আর দলের ‘অপশন’ নন, তিনি ‘অপরিহার্য সম্পদ’। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের অর্থনীতিতে, নকআউট ম্যাচে পারফর্ম করাই আসল মুদ্রা, আর হেড ঠিক সময়ে জ্বলে উঠে নিজের ভাগ্য নিজেই গড়ে নিয়েছেন।
কাল্ট হিরো ইমেজ এবং মাঠের বাইরের জীবন
ট্রাভিস হেড টিভির পর্দার তথাকথিত গ্ল্যামারাস বা চকচকে সুপারস্টারদের মতো নন। তার মধ্যে একটা “ওল্ড স্কুল” বা পুরনো দিনের লড়াকু মানসিকতা এবং “কাল্ট হিরো” সুলভ ভাবভঙ্গি আছে, যা ব্র্যান্ডগুলো এখন লুফে নিচ্ছে। তার হাতে থাকা ‘গ্রে-নিকোলস’ ব্যাটটি তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোহলির মতো বিশাল এনডোর্সমেন্ট লিস্ট না থাকলেও, তার জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে স্পন্সরশিপের সুযোগও বাড়ছে।
২০২৫ সালে ট্রাভিস হেডের এই আর্থিক উত্থান প্রমাণ করে যে, তিনি টেস্টের আভিজাত্য এবং টি-টোয়েন্টির মারকাটারি ব্যাটিং, দুটিই সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছেন। ১৪ কোটি রুপির আইপিএল রিটেইনশন আর অস্ট্রেলিয়া দলের পাকা জায়গা নিয়ে ৩১ বছর বয়সী হেড এখন ক্যারিয়ারের স্বর্ণযুগে প্রবেশ করেছেন। তিনি যদি এভাবেই ব্যাট চালাতে থাকেন, তবে ২০২৬ সালে আজকের এই ৪ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তিকেও মনে হবে নিতান্তই সস্তা।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)
১. ২০২৫ সালে ট্রাভিস হেডের আনুমানিক নেট ওয়ার্থ কত?
ট্রাভিস হেডের আনুমানিক নেট ওয়ার্থ বা মোট সম্পত্তি ৩.৫-৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২৪-৩০ কোটি টাকার সমান।
২. সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ ২০২৫ আইপিএলে ট্রাভিস হেডকে কত টাকায় রিটেইন করেছে?
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ (SRH) তাকে ১৪ কোটি রুপিতে (প্রায় ১.৭ মিলিয়ন ডলার) রিটেইন করেছে, যা তার আগের বেতনের চেয়ে অনেক বেশি।
৩. ট্রাভিস হেডের কি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সাথে কেন্দ্রীয় চুক্তি আছে?
হ্যাঁ, তিনি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সাথে একটি লোভনীয় কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আছেন, যার মাধ্যমে তিনি ম্যাচ ফি ও বোনাস ছাড়াই বছরে প্রায় ৯ লাখ ৫১ হাজার মার্কিন ডলার আয় করেন।
ডিসক্লেইমার: এই আজকের ট্রেন্ডিং (ব্লগ) কেবল লেখকের ব্যক্তিগত মতামত ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে। আলোচিত বিষয়গুলো ভেবে দেখুন, বিশ্লেষণ করুন, আর নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিন।
বিবিএল ২০২৫: দ্রুততম লাইভ স্কোর ও প্লেয়ার ম্যাচ-আপ ডেটার জন্য সেরা প্ল্যাটফর্ম কোনটি
BJ Sports কীভাবে এনপিএল ম্যাচের ভবিষ্যদ্বাণীতে ৯৫% সাফল্য পেলো?
অন্য সব স্পিনার ছেড়ে হোবার্ট হারিকেনস কেন রিশাদ হোসেনকেই বেছে নিল?
ব্যাক-টু-ব্যাক ফাইনাল: সুদূর পশ্চিম রয়্যালস কি অবশেষে এনপিএল ২০২৫-এর শিরোপা জিততে পারবে?

