
আইসিসি নারী টি২০ বিশ্বকাপ বিশ্বমানের বোলিং পারফরম্যান্স প্রদর্শনের জন্য একটি বড় মঞ্চ। বছরের পর বছর, আমরা এই ফরম্যাটে অসাধারণ দক্ষতা এবং অতুলনীয় ধারাবাহিকতা নিয়ে বেশ কয়েকজন চমৎকার বোলারকে আধিপত্য করতে দেখেছি। এই টুর্নামেন্টের শীর্ষ পাঁচ উইকেট-শিকারী এর উপর আলোকপাত করে, তাদের চিত্তাকর্ষক পরিসংখ্যান এবং তাদের দলের সাফল্যে অবদান নিয়ে নিম্নলিখিত ঐতিহাসিক পর্যালোচনা করা হল-
১. মেগান শুট (অস্ট্রেলিয়া নারী)

- সময়কাল: ২০১৬ – বর্তমান
- ম্যাচ: ২৫
- বল: ৫১৫
- রান: ৫০৩
- উইকেট: ৪৩
- সেরা বোলিং পরিসংখ্যান: ৪/১৮
- বোলিং গড়: ১১.৬৯
- ইকোনমি: ৫.৮৬
- স্ট্রাইক রেট: ১১.৯৭
মেগান শুট নারী ক্রিকেটে একটি শক্তিশালী নাম, আইসিসি মহিলা টি২০ বিশ্বকাপে উইকেট-শিকারীর তালিকায় তিনি প্রথম স্থানে অবস্থান করছেন। শুটের বল সুইং করানোর ক্ষমতা, বিশেষ করে পাওয়ারপ্লে এবং ডেথ ওভারে, তাকে অস্ট্রেলিয়া নারী দলের প্রধান বোলার করে তুলেছে। তার অসাধারণ বোলিং গড় ১১.৬৯ এবং স্ট্রাইক রেট ১১.৯৭, তিনি অস্ট্রেলিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক দিয়েছেন। তার সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ৪/১৮ তার ম্যাচ-জয়ের সক্ষমতার প্রমাণ দেয়, কারণ তিনি প্রায়ই চাপের পরিস্থিতিতে জ্বলে উঠেন। ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে বছরের পর বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ার আধিপত্যের মূল অবদানকারীও মেগান।
২. শাবনিম ইসমাইল (দক্ষিণ আফ্রিকা নারী)

- সময়কাল: ২০০৯ – ২০২৩
- ম্যাচ: ৩২
- বল: ৬৭৫
- রান: ৬৫৬
- উইকেট: ৪৩
- সেরা বোলিং পরিসংখ্যান: ৩/৫
- বোলিং গড়: ১৫.২৫
- ইকোনমি: ৫.৮৩
- স্ট্রাইক রেট: ১৫.৬৯
শাবনিম ইসমাইল, যিনি তার দ্রুত গতির জন্য পরিচিত, তিনিও মেগান এর সমান সংখ্যক ৪৩ উইকেট শিকার করেছেন। শাবনিম এর আগ্রাসী স্পেল তাকে নারী ক্রিকেটে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ফাস্ট বোলারদের একজন করে তুলেছে। ২০০৯ সাল থেকে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিত্ব করছেন, এবং তার ধারাবাহিকতা অসাধারণ। তার বোলিং গড় ১৫.২৫ এবং ইকোনমি ৫.৮৩, যা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে শাবনিম এর দলের জন্য তার দৃঢ়তা প্রদান করেছে। তার সেরা পারফরম্যান্স ৩/৫ শীর্ষ-অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের ভেঙে ফেলার ক্ষমতা প্রদর্শন করে। শাবনিম উন্মাদনা এবং গতি তাকে ক্রিকেটের জগতে বিশাল সম্মান এনে দিয়েছে, তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং লাইনে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়েছে।
৩. অ্যানিয়া শ্রাবসোল (ইংল্যান্ড নারী)

- সময়কাল: ২০১০ – ২০২০
- ম্যাচ: ২৭
- বল: ৫৭৭
- রান: ৫১২
- উইকেট: ৪১
- সেরা বোলিং পরিসংখ্যান: ৩/৬
- বোলিং গড়: ১২.৪৮
- ইকোনমি: ৫.৩২
- স্ট্রাইক রেট: ১৪.০৭
আইসিসি নারী টি২০ বিশ্বকাপে অ্যানিয়া শ্রাবসোল তার সুইং বোলিং এবং ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া স্পেলের জন্য সুপরিচিত ছিল। ৪১ উইকেট নিয়ে তিনি টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন। শ্রাবসোলের নতুন বল নিয়ন্ত্রণ এবং পিচ থেকে মুভমেন্ট বের করার সক্ষমতা প্রায়ই ইংল্যান্ডের প্রধান অস্ত্র হয়েছে। তার গড় ১২.৪৮ এবং ইকোনমি ৫.৩২ তার বোলিং এর কার্যকারিতা তুলে ধরে। শ্রাবসোলের সেরা পরিসংখ্যান ৩/৬ তার দলের জয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করার কথা সাক্ষ্য দেয়। তার অসাধারণ পারফরম্যান্স ইংল্যান্ডের ধারাবাহিক টি২০ পারফরম্যান্সে এক সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
আরও পড়ুন: আইসিসি নারী টি২০ বিশ্বকাপ ২০২৪- এ নজর কাড়তে পারে যে সকল গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়
৪. এলিস পেরি (অস্ট্রেলিয়া নারী)

- সময়কাল: ২০০৯ – বর্তমান
- ম্যাচ: ৪৩
- বল: ৭৩২
- রান: ৭০৭
- উইকেট: ৪০
- সেরা বোলিং পরিসংখ্যান: ৩/১২
- বোলিং গড়: ১৭.৬৭
- ইকোনমি: ৫.৭৯
- স্ট্রাইক রেট: ১৮.৩০
এলিস পেরির অলরাউন্ড দক্ষতা তাকে খেলার ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় বানিয়েছে, এবং তার বোলিং দক্ষতা এর ব্যতিক্রম নয়। ৪৩ ম্যাচে ৪০ উইকেট নিয়ে, পেরি আইসিসি নারী টি২০ বিশ্বকাপ এর ইতিহাসে অস্ট্রেলিয়ার জন্য একটি ধারাবাহিক উইকেট-শিকারী। তার মাঝারি গতি ও কৌশলগত বুদ্ধিমত্তার দরুন,তিনি অনেক ব্যাটারকে অসুবিধায় ফেলেছেন। যদিও পেরির স্ট্রাইক রেট এই তালিকার অন্যদের চেয়ে কিছুটা বেশি, তার ইকোনমি ৫.৭৯ রান আটকে রাখার ক্ষমতা তার দলের জন্য বিশাল মূল্য প্রমাণ করে। পেরির সেরা পরিসংখ্যান ৩/১২, দলের সর্বাধিক প্রয়োজনের সময় তার জ্বলে উঠার ক্ষমতা প্রদর্শন করে।
৫. স্টেফানি টেলর (ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী)

- সময়কাল: ২০০৯ – বর্তমান
- ম্যাচ: ৩৩
- বল: ৫১৬
- রান: ৫১২
- উইকেট: ৩৩
- সেরা বোলিং পরিসংখ্যান: ৪/১২
- বোলিং গড়: ১৫.৫১
- ইকোনমি: ৫.৯৫
- স্ট্রাইক রেট: ১৫.৬৩
স্টেফানি টেলর, যিনি মূলত তার ব্যাটিং দক্ষতার জন্য পরিচিত, তিনি আইসিসি নারী টি২০ বিশ্বকাপে একটি ফলদায়ক উইকেট-শিকারীও। টেলরের অফ-স্পিন বোলিং সংকটপূর্ণ মুহূর্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট এনে দিয়েছে। ৩৩ উইকেট, ১৫.৫১ বোলিং গড় এবং ৫.৯৫ ইকোনমি এর সাথে, টেলর প্রায়ই বোলিংয়ের মাধ্যমে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। তার সেরা বোলিং পারফরম্যান্স ৪/১২ একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এসেছে, যেখানে তিনি ব্যাট এবং বল উভয় ক্ষেত্রেই অবদান রেখেছিলেন। টেলরের বহুমুখিতা এবং নেতৃত্ব ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি২০ বিশ্বকাপ যাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যা ২০১৬ সালে তাদের শিরোপা জয়ের অভিযানেও অব্যাহত ছিল।
উপসংহার
আইসিসি নারী টি২০ বিশ্বকাপ অসাধারণ বোলিং প্রতিভার একটি প্রদর্শনী হয়ে উঠেছে, এবং এই পাঁচজন খেলোয়াড় তাদের অসাধারণ পারফরম্যান্সের মাধ্যমে টুর্নামেন্টের ইতিহাসে তাদের নাম খোদাই করেছে। মেগান শুটের ধারাবাহিক সুইং থেকে শাবনিম ইসমাইল এর দ্রুত গতি, প্রতিটি বোলার একটি বিশেষ দক্ষতা নিয়ে আসে। অ্যানিয়া শ্রাবসোল এর বল সুইং করার দক্ষতা, এলিস পেরির অলরাউন্ড প্রতিভা এবং স্টেফানি টেলরের বহুমুখিতা দলের জন্য তাদের অপরিহার্য সম্পদ করে তুলেছে। নারীদের ক্রিকেট খেলা অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকায়, এই বোলাররা ভবিষ্যৎ ক্রিকেটারদের জন্য রোল মডেল হিসেবে থেকে যাবে, যা নারীদের টি২০ ক্রিকেটে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করবে।
বিবিএল ২০২৫: দ্রুততম লাইভ স্কোর ও প্লেয়ার ম্যাচ-আপ ডেটার জন্য সেরা প্ল্যাটফর্ম কোনটি
BJ Sports কীভাবে এনপিএল ম্যাচের ভবিষ্যদ্বাণীতে ৯৫% সাফল্য পেলো?
অন্য সব স্পিনার ছেড়ে হোবার্ট হারিকেনস কেন রিশাদ হোসেনকেই বেছে নিল?
ব্যাক-টু-ব্যাক ফাইনাল: সুদূর পশ্চিম রয়্যালস কি অবশেষে এনপিএল ২০২৫-এর শিরোপা জিততে পারবে?

