১৮ ডিসেম্বর রাত, কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে যেন পূর্ণতা পেলো ফুটবল বিশ্বকাপ। পূর্ণতা পেয়েছে বিশ্ব ফুটবলের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসির ক্যারিয়ার। ফ্রান্সকে হারিয়ে দীর্ঘ ৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘুচালো আর্জেন্টিনা। সেইসাথে অধরা বিশ্বকাপ শিরোপায় চুমু খাওয়ার সৌভাগ্য হলো ফুটবলের ক্ষুদে জাদুকরের। হাসি মুখেই বিশ্বকাপ যাত্রার ইতি টানলেন সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসি।
ইউরোপ এবং আমেরিকা, ফাইনালে দুই মহাদেশের লড়াইটা জমে উঠেছে বেশ। শুরুতেই যেন ইউরোপিয়ান পাওয়ার ফুটবলকে চেপে ধরে লাতিন আমেরিকার শৈল্পিকতা। একপাশে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া এবং আরেক পাশে মেসির ভয়ঙ্কর রূপ ধারনে বারবার আঘাত করছিলো ফরাসি দুর্গে। ফরাসিদের ডি বক্সে আক্রমণের পসরা সাজিয়ে বসেন আলবিসেলেস্তেরা। প্রথমার্ধে ২ – ০ একপেশে ফুটবল খেলে গোলের ২ লিডও পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। পেনাল্টি থেকে গোল করে ম্যাচের মোমেন্টাম তৈরি করেন স্বয়ং লিওনেল মেসি। আর এরপর ডি মারিয়ার গোল ফ্রান্সের ওপর চাপ বাড়ায়।
তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে বদলে যেতে শুরু করে ম্যাচের দৃশ্যপট। ম্যাচের প্রায় শেষদিকে জোড়া গোল করে দলকে সমতায় ফেরান এমবাপ্পে। আর তাতেই খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও ১ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু ফের গোল শোধ করে দেন ফরাসিরা। এমবাপ্পে করলেন হ্যাটট্রিক। রেফারি যখন শেষ বাঁশি বাজাবেন, তখন স্কোরলাইন ৩ – ৩!
ট্রাইবেকারে আর্জেন্টিনাকে শিরোপার মুকুট এনে দেওয়ার মহানায়ক বনে গেলেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। তার অতিমানবীয় দক্ষতায় দুটি পেনাল্টি মিস করেছে ফ্রান্স। অপরদিকে সবকটি বলই ফরাসিদের জালে পাঠিয়েছেন আর্জেন্টাইনরা। ৪ – ২ গোলের জয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা লুসাইল। যে আনন্দের ঢেউ গিয়ে আঁচড়ে পড়েছে বুয়েন্স এইরেসে। বিশ্বজয়ের মতো বাঁধভাঙা আনন্দ বলে তো কথা।
২০১৪ সালে খুব কাছে গিয়েও সোনায় মোড়ানো ট্রফিটি ছুঁয়ে দেখা হয়নি আর্জেন্টাইনদের। এবার আর চাপা কষ্টে কাঁদতে হলো না তাদের। তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলেছেন মেসিরা। আলবিসেলেস্তেদের জার্সিতে যোগ হলো আরো একটি তারা। চ্যাম্পিয়নের পুরস্কার হিসেবে ট্রফি যেমন পেয়েছে, তেমনি ৪২০ কোটি টাকার প্রাইজমানিও পেয়েছে আর্জেন্টিনা।
বিশ্বকাপের আগেই মেসি ঘোষনা দিয়েছেন কাতার বিশ্বকাপই মেসির শেষ বিশ্বকাপ। শেষ বিশ্বকাপেই অধোরা বিশ্বকাপ ট্রফি জিতে মেসির ক্যারিয়ার যেন পূর্ণতা পেলো। ক্যারিয়ারে যে অপূর্ণতা ছিলো এবার যেন সব চুকেবুকে গেলো। ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপে এসে মেসি পেলেন তার ফুটবল ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় পূর্ণতা।