আফগানিস্তান বনাম শ্রীলঙ্কা (সুপার ৪ – ম্যাচ ১) – হাইলাইটস
গ্রুপপর্বে আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ১০৫ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। হেরেছিল ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে। এবার যেন সেই হারের ‘প্রতিশোধ’ নিলো লঙ্কানরা। শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সুপার ফোর পর্বের প্রথম ম্যাচে শুভসূচনা করলো দাসুন শানাকার দল। আফগানিস্তানকে হারালো ৪ উইকেট আর ৫ বল হাতে রেখে।
ম্যাচে ছিল টানটান উত্তেজনা। বারবার ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বদল হচ্ছিল। ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত জয় হলো শ্রীলঙ্কার। আর আফগানিস্তান পেল টুর্নামেন্টে প্রথম হারের স্বাদ। টসে হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে রহমানউল্লাহ গুরবাজের অসাধারণ ইনিংসের সৌজন্যে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৭৫ রান সংগ্রহ করে আফগানিস্তান।
কিন্তু শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) ‘রহমানউল্লাহ গুরবাজ প্রদর্শনী’র পর শারজাহ স্টেডিয়াম দেখেছে শ্রীলঙ্কার টিম ইফোর্ট। রান তাড়া করতে নেমে লঙ্কানদের মধ্যে কেউ হাফসেঞ্চুরিও করেননি, তবে ৩০ রানের বেশি করেছেন ৪ জন ব্যাটার। কুশল মেন্ডিস ৩৬, পাথুম নিসাঙ্কা ৩৫, দানুশকা গুনাথিলাকা ৩৩ ও ভানুকা রাজাপক্ষ ৩১ রান করেন।
রান তাড়ায় নেমে ফজলহক ফারুকীর করা ইনিংসের প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকান পাথুম নিসাঙ্কা। ৬.২ ওভারে ওপেনিং জুটিতে চলে আসে ৬২ রান। ২ চার ৩ ছক্কায়, ১৯ বলে ৩৬ রান করা কুশল মেন্ডিস নবীন-উল-হকের শিকার হলে এই জুটির অবসান হয়। পাথুম নিসাঙ্কা ফেরেন ২৮ বলে ৩৫ রান করে।
উইকেটের পতন হতে থাকলেও শ্রীলঙ্কার ব্যাটাররা আক্রমণ মানিসকতা থেকে একচুলও সরে দাঁড়াননি। প্রায় সবাই আফগান বোলারদের ওপর চড়াও হয়েছেন। রশিদ খানের বলে বোল্ড হওয়ার আগে দানুশকা গুনাথিলাকা করেন ২০ বলে ৩৩ রান। ভানুকা রাজাপাক্ষের ১৪ বলে ৩১ রানের গুরুত্ব অপরিসীম।
ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ১৯তম ওভারেই স্কোর সমান হয়ে যায় লঙ্কানদের। শেষ ওভারে তাদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল মাত্র ১ রান। ফজলহক ফারুকীর করা শেষ ওভারের প্রথম বলটিই সীমানাছাড়া করে ৫ বলে হাতে রেখে দলকে ৪ উইকেটের জয় এনে দেন হাসারাঙ্গা। তিনি অপরাজিত থাকেন ৯ বলে ১৬ রান করে।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৬ রানের ভালো ওপেনিং জুটি উপহার দেন আফগানিস্তানের দুই ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাই এবং রহমানউল্লাহ গুরবাজ। পঞ্চম ওভারে ১৬ বলে ১৩ রান করা জাজাই দিলশান মাদুশাঙ্কা’র বলে বোল্ড হলে ভাঙে এই উদ্বোধনী জুটি।
মাত্র ২২ বলে ফিফটি পূরণ করেন গুরবাজ। দ্বিতীয় উইকেটে ইব্রাহিম জারদানের সঙ্গে তার জুটি জমে ওঠে। ১৩তম ওভারে তিন অংক স্পর্শ করে আফগানদের স্কোর। দারুণ ব্যাটিংয়ে গুরবাজ এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। মনে হচ্ছিল, আসরের প্রথম সেঞ্চুরিটা হয়ত তার ব্যাট থেকেই দেখা যাবে।
কিন্ত তা হলো না। ৪৫ বলে ৮৪ রান করে আসিথা ফার্নান্দোকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন হাসারাঙ্গার হাতে। তার ইনিংসে ছিল ৪টি বাউন্ডারি এবং ৬টি ছক্কার মার। এর সাথে অবসান হয় ৬৪ বলে ৯৩ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটির। ১০ বলে ১৭ করে নাজিবুল্লাহ জারদান রান-আউট হয়ে যান।
১৯তম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন মহীশ তিকশানা। চতুর্থ বলে ফিরিয়ে দেন ৪০ রান করা (৩৮ বল) ইব্রাহিম জারদানকে। পরের বলেই কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে ফিরেন আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী (১)। শেষ ওভারের শেষ বলে আফগানদের ৬ষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটে রশিদ খানের (৯) রান-আউটে।
শ্রীলঙ্কার হয়ে দিলশান মাদুশাঙ্কা সর্বোচ্চ ২টি এবং মহীশ তিকশানা এবং আসিথা ফার্নান্দো ১টি করে উইকেট তুলে নিয়েছেন। তবে ম্যাচ হেরে গিয়েও অনবদ্য ইনিংস খেলে প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ।
আফগানিস্তান বনাম শ্রীলঙ্কা এর স্কোরবোর্ড
আফগানিস্তান – ১৭৫/৬ (২০.০)
শ্রীলঙ্কা – ১৭৯/৬ (১৯.১)
ফলাফল – শ্রীলঙ্কা ৪ উইকেটে জয়ী
প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ – রহমানউল্লাহ গুরবাজ
আফগানিস্তান বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচের একাদশ
আফগানিস্তান | মোহাম্মদ নবী (অধিনায়ক), রহমানউল্লাহ গুরবাজ (উইকেট রক্ষক), হজরতউল্লাহ জাজাই, ইব্রাহিম জাদরান, নাজিবুল্লাহ জাদরান, সামিউল্লাহ শিনওয়ারি, করিম জানাত, রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, নবীন-উল-হক, এবং ফজলহক ফারুকী। |
শ্রীলঙ্কা | দাসুন শানাকা (অধিনায়ক), কুশল মেন্ডিস (উইকেট রক্ষক), পাথুম নিসাঙ্কা, চারিথ আসালাঙ্কা, ভানুকা রাজাপক্ষ, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, দানুশকা গুনাথিলাকা, চামিকা করুনারত্নে, আসিথা ফার্নান্দো, মহীশ তিকশানা, এবং দিলশান মাদুশাঙ্কা। |