পাকিস্তান বনাম ইংল্যান্ড (প্রথম টেস্ট)
ভারত, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার পর এবার ইংল্যান্ডের বাজবল কৌশলের কাছে ধরাশায়ী হলো স্বাগতিক পাকিস্তান। ১৭ বছর পর ঘরের মাটিতে ইংলিশদের বিপক্ষে খেলা তিন টেস্ট ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৭৪ রানে হেরেছে বাবর আজমের দল।
রাওয়ালপিন্ডিতে সোমবার (৫ ডিসেম্বর) ৩৪৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তানের জন্য শেষদিনে প্রয়োজন ছিল ২৬৩ রান। আগের দিন ২ উইকেট হারিয়ে ৮০ রান তোলা স্বাগতিকরা জয়ের স্বপ্ন দেখলেও শেষ পর্যন্ত ইংলিশদের বোলিং তোপে তাদের ইনিংস থামে ২৬৮ রানে। ৪ উইকেট করে তুলে নেন ওলি রবিনসন ও জেমস অ্যান্ডারসন। এছাড়া জ্যাক লিচ ও বেন স্টোকস ১টি করে উইকেট পেয়েছেন।
প্রায় পাঁচ দিনের লড়াইয়ে দুদলই লড়েছে সমানে সমানে। তবে ইংল্যান্ডের বাজবলের বিপরীতে শেষ পর্যন্ত টেকেনি পাকিস্তানের চিরাচরিত লড়াই। ইংল্যান্ড এ কৌশল নিয়ে খেলা শুরু করে গত মে মাসে নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পর থেকেই। যেখানে টেস্ট ম্যাচের চিরাচরিত চরিত্র ধীরেসুস্থে ব্যাট করার বিপরীতে ভয়ডরহীনভাবে ওডিআই স্টাইলে ব্যাট করে দ্রুত রান তুলে নেবে দল।
সে কৌশল নিয়ে সফলও ম্যাককালাম ও ইংল্যান্ড। জুনে তারা লর্ডসে এ কৌশল শুরু করে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। সিরিজে সফলও হয় ইংলিশরা। তিন ম্যাচ সিরিজে তারা হোয়াইটওয়াশ করে কিউইদের। এরপর জুলাইয়ে ভারতকে হারায় একমাত্র টেস্টে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারায় ২-১ ব্যবধানে।
এবার ডিসেম্বরে তাদের সেই কৌশলে পরাস্ত পাকিস্তান। রাওয়ালপিন্ডিতে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করে ইংল্যান্ড ৬৫৭ রান সংগ্রহ করে মাত্র ১০১ ওভারে। যেখানে রানরেট ছাড়িয়ে গেছে ওডিআই সংস্করণকেও। ইংলিশ ব্যাটার হ্যারি ব্রুক ১১৬ বলে ১৫৩, জ্যাক ক্রাওলি ১১১ বলে ১২২, বেন ডাকেট ১১০ বলে ১০৭ ও ওলি পোপ ১০৪ বল মোকাবিলায় করেন ১০৮ রান। তাদের রানের তুলনায় বল মোকাবিলা দেখলে, টেস্ট ম্যাচ বলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে।
পাকিস্তানের হয়ে সাতের ওপর ইকোনমি রেটে সর্বাধিক ৪ উইকেট তুলে নেন স্পিনার জাহিদ মাহমুদ। এছাড়া নাসিম শাহ ৩টি, মোহাম্মদ আলী ২টি এবং হারিস রউফ ১টি উইকেট শিকার করেন।
ইংল্যান্ডের এই বিশাল স্কোরের জবাবে পাকিস্তান চিরাচরিত পদ্ধতিতেই ব্যাটিং করতে থাকে। ১৫৫.৩ ওভার মোকাবিলায় ৫৭৯ রান তুলতে সমর্থ হয় ম্যান ইন গ্রিনরা। পাক অধিনায়ক বাবর আজম ১৬৮ বলে ১৩৬, ইমাম-উল-হক ২০৭ বলে ১২১ ও আব্দুল্লাহ শফিক ২০৩ বলে ১১৪ রান করেন। ইংলিশদের পক্ষে স্পিনার উইল জ্যাকস সর্বোচ্চ ৬টি উইকেট শিকার করেন। এছাড়া জ্যাক লিচ ২টি এবং ওলি রবিনসন ও জেমস অ্যান্ডারসন ১টি করে উইকেট তুলে নেন।
এ পর্যন্ত দুদলের লড়াইটাই ছিল প্রায় সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৩৫.৫ ওভার মোকাবিলায় ২৬৪ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জে ছুড়ে দেয় ইংলিশরা। দেড় দিনে ৩৪৩ রান তোলার চেয়েও কঠিন উইকেট টিকিয়ে রাখা। শেষ পর্যন্ত ৯৬.৩ ওভার মোকাবিলা করে ২৬৮ রান তুললেও উইকেট টিকিয়ে রাখতে পারেনি স্বাগতিকরা। আর তাতে ১৭ বছর পর পাকিস্তানে জয় দিয়েই সিরিজ শুরু করেছে ইংল্যান্ড।
২য় ইনিংসে সফরকারীদের হয়ে হ্যারি ব্রুক ৬৫ বলে সর্বোচ্চ ৮৭ রান করেন। এছাড়া জো রুট ৬৯ বলে ৭৩ এবং জ্যাক ক্রাওলি ৪৮ বলে ৫০ রান করেন। ম্যান ইন গ্রিনদের হয়ে মোহাম্মদ আলী, নাসিম শাহ এবং জাহিদ মাহমুদ ২টি করে এবং আগা সালমান ১টি উইকেট তুলে নিয়েছেন। পরাজয় বরণের পূর্বে স্বাগতিকদের হয়ে ২য় ইনিংসে ব্যাটার সৌদ শাকিল ১৫৯ বলে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেছিলেন।
প্রথম ইনিংসে ১টি এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৪টি সহ মোট ৫টি উইকেট শিকার করে প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন ইংলিশ পেসার ওলি রবিনসন। আগামী ০৯ ডিসেম্বর (শুক্রবার) এই দুই দল সিরিজের ২য় ম্যাচে মুলতান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে।
পাকিস্তান বনাম ইংল্যান্ড এর স্কোরবোর্ড
ইংল্যান্ড (১ম ইনিংস) – ৬৫৭/১০ (১০১.০)
পাকিস্তান (১ম ইনিংস) – ৫৭৯/১০ (১৫৫.৩)
ইংল্যান্ড (২য় ইনিংস) – ২৬৪/৭ (ডি) (৩৫.৫)
পাকিস্তান (২য় ইনিংস) – ২৬৮/১০ (৯৬.৩)
ফলাফল – ইংল্যান্ড ৭৪ রানে জয়ী
প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ – ওলি রবিনসন
পাকিস্তান বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচের একাদশ
পাকিস্তান | বেন স্টোকস (অধিনায়ক), ওলি পোপ (উইকেট রক্ষক), জ্যাক ক্রাওলি, জো রুট, বেন ডাকেট, হ্যারি ব্রুক, লিয়াম লিভিংস্টোন, জ্যাক লিচ, উইল জ্যাকস, ওলি রবিনসন এবং জেমস অ্যান্ডারসন। |
ইংল্যান্ড |
বাবর আজম (অধিনায়ক), মোহাম্মদ রিজওয়ান (উইকেট রক্ষক), আব্দুল্লাহ শফিক, আজহার আলী, সৌদ শাকিল, আগা সালমান, ইমাম-উল-হক, নাসিম শাহ, মোহাম্মদ আলী, হারিস রউফ, এবং জাহিদ মাহমুদ। |