ইংল্যান্ড বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা (প্রথম টেস্ট) – হাইলাইটস
টেস্ট ক্রিকেটে নতুন এক কৌশল ‘বাজবল’ এনে সবাইকে চমকে দিয়েছিল ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ইংল্যান্ড। টানা চার টেস্টে নিউজিল্যান্ড ও ভারতকে সে কৌশলে নাস্তানাবুদ করলেও, বাজবল কাজে আসেনি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচটি ইনিংস ও ১২ রানে হেরেছে ইংলিশরা।
লর্ডসে শুক্রবার (১৯ আগস্ট) প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনে সবকটি উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস থেমে যায় মাত্র ১৪৯ রানে। এর আগে প্রথম ইনিংসে তাদের সংগ্রহ ছিল ১৬৫ রান। অন্যদিকে এক ইনিংস ব্যাট করে প্রোটিয়াদের সংগ্রহ ছিল সবকটি উইকেট হারিয়ে ৩২৬ রান।
এর আগে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬১ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাট করতে নামে ইংল্যান্ড। তখনো ইংলিশরা হয়তো ভাবতে পারেনি ইনিংস ব্যবধানে ম্যাচটি হারতে যাচ্ছে তারা। কারণ তাদের বাজবল কৌশলে প্রথম ইনিংসের তুলনায় দ্বিতীয় ইনিংসে সব ব্যাটাররাই ছিল বিধ্বংসীরূপে।
যার প্রমাণ নিউজিল্যান্ড ও ভারতের বিপক্ষে সবশেষ চার টেস্টে দিয়েছিল ম্যাককালামের শিষ্যরা। ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট করে একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে চাপে রাখা হতো প্রতিপক্ষের বোলারদের। তবে এবার উল্টো নাকাল হলেন বেন স্টোকসরা।
প্রোটিয়া বোলারদের সামনে প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও টিকতে পারলেন না তারা। ওপেনিং জুটিতে ২০ রান এনে দেয়ার পর কেশব মহারাজের এলবিডব্লিউয়ের শিকার হন জ্যাক ক্রলি। ২২ বল মোকাবিলায় ১৩ রান করেন তিনি। ১৫ বলে ৫ রান করে ওলি পোপও কেশবের বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হন।
এরপর আক্রমণে আসে প্রোটিয়া পেসাররা। লুঙ্গি এনগিডি’র শিকার হন জো রুট (৬), আনরিখ নর্কিয়া’র শিকার হন জনি বেয়ারস্টো (১৮) এবং অ্যালেক্স লিস (৩৫)। এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে সতীর্থদের আসা যাওয়া দেখছিলেন অধিনায়ক বেন স্টোকস। ইংলিশ শিবিরের উইকেট রক্ষক ব্যাটার বেন ফোকসও নর্কিয়া’র শিকার হয়ে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন।
৮৬ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট হারিয়ে ততক্ষণে ইনিংস হারের শঙ্কা জাগে ইংলিশ শিবিরে। স্টুয়ার্ট ব্রডকে নিয়ে শেষ চেষ্টা চালান স্টোকস। দুজনের জুটিতে আসে ৫৫ রান। ভুল শট খেলে ২৯ বলে ৩৫ রান করে রাবাদার বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ব্রড।
এরপর ক্রিজে এসে ম্যাথু পটস অধিনায়ককে সঙ্গ দিতে পারেননি। দলকে লজ্জা থেকে রক্ষা করতে পারেননি স্টোকসও। ২৮ বলে ২০ রান করে রাবাদার শিকার হয়ে মাথা নিচু করে তাকে ফিরতে হয় সাজঘরে। ১৪৯ রানে থামে টেস্ট ক্রিকেটকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়া ইংল্যান্ডের ইনিংস। হারতে হয় ইনিংস ও ১২ রানে।
এর আগে ম্যাককলামের শিষ্যদের প্রথম ইনিংসে একাই ধসিয়ে দিয়েছিলেন কাগিসো রাবাদা। ওই ইনিংসে তার শিকার ৫ উইকেট। মার্কো ইয়ানসেন ২টি এবং আনরিখ নর্কিয়া ৩টি উইকেট শিকার করে ঘরের মাঠে ইংলিশদের ইনিংস যাত্রা থামিয়েছিলেন মাত্র ১৬৫ রানে।
অন্যদিকে দ্বিতীয় ইনিংসে নিজের ঝুলিতে উইকেট পুরেছেন পাঁচ প্রোটিয়া বোলারের সবাই। দ্বিতীয় ইনিংসে আনরিখ নর্কিয়া শিকার করেছেন ৩টি উইকেট। রাবাদা, কেশব মহারাজ ও ইয়ানসেন শিকার করেছেন ২টি করে উইকেট। একটি উইকেট তুলে নিয়েছেন লুঙ্গি এনগিডি।
অন্যদিকে ডিন এলগারের ৪৭, সারেল এরউইয়ি’র ৭৩, মার্কো ইয়ানসেনের ৪৮ ও কেশব মহারাজের ৪১ রানের ওপর ভর করে প্রথম ইনিংসে ৩২৬ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ইংলিশদের হয়ে ৩টি করে উইকেট শিকার করেন ব্রড ও স্টোকস। পটসের শিকার ২টি এবং একটি করে উইকেট তুলে নেন জেমস অ্যান্ডারসন ও জ্যাক লিচ। সেই সাথে লর্ডসে শত উইকেট শিকারের মাইলফলক স্পর্শ করেন ব্রড।
প্রথম ইনিংসে ৫টি এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ২টি উইকেট সহ মোট ৭টি উইকেট তুলে নিয়ে প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন প্রোটিয়া পেসার কাগিসো রাবাদা। আগামী ২৫শে আগস্ট এই দুই দল সিরিজের ২য় ম্যাচে ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে মুখোমুখি হবে।
ইংল্যান্ড বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা এর স্কোরবোর্ড
ইংল্যান্ড (১ম ইনিংস) – ১৬৫/১০ (৪৫.০)
দক্ষিণ আফ্রিকা (১ম ইনিংস) – ৩২৬/১০ (৮৯.১)
ইংল্যান্ড (২য় ইনিংস) – ১৪৯/১০ (৩৭.৪)
ফলাফল – দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস এবং ১২ রানে জয়ী
প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ – কাগিসো রাবাদা
ইংল্যান্ড বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের একাদশ
ইংল্যান্ড | বেন স্টোকস (অধিনায়ক), বেন ফোকস (উইকেট রক্ষক), অ্যালেক্স লিস, ওলি পোপ, জ্যাক ক্রলি, জো রুট, জনি বেয়ারস্টো, স্টুয়ার্ট ব্রড, ম্যাথু পটস, জ্যাক লিচ এবং জেমস অ্যান্ডারসন। |
দক্ষিণ আফ্রিকা | ডিন এলগার (অধিনায়ক), কাইল ভেরেইনা (উইকেট রক্ষক), সারেল এরউইয়ি, এইডেন মার্করাম, কিগান পিটারসেন, র্যাসি ফন ডার ডুসেন, মার্কো ইয়ানসেন, কাগিসো রাবাদা, কেশব মহারাজ, আনরিখ নর্কিয়া এবং লুঙ্গি এনগিডি। |