
সাকিব আল হাসান আর ‘একঘেয়ে গল্প’, এই দুটো জিনিস কখনোই একসাথে যায় না। আমরা যখন সবাই মনে মনে সাকিবের ক্যারিয়ারকে ‘লিজেন্ডস: রিটায়ার্ড’ বা সাবেক কিংবদন্তিদের ফোল্ডারে ফেলে দিয়েছিলাম, ঠিক তখনই গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন তিনি। কানপুর টেস্টের পর সবাই ভেবে নিয়েছিল, বিদেশের মাটিতেই বুঝি নিঃশব্দে বিদায় হয়ে গেল বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটারের। কিন্তু সাকিব আল হাসান মানেই তো চমক! তিনি নিজের স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, কোনো ফরম্যাট থেকেই তিনি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নেননি। বরং তার মাথায় ঘুরছে এক নিখুঁত বিদায়ী পরিকল্পনা, ঘরের মাঠে ১টি টেস্ট, ১টি ওয়ানডে এবং ১টি টি-টোয়েন্টি খেলে রাজকীয় বিদায় নেওয়া। পরিকল্পনাটা বেশ সাহসি, কিন্তু সাবেক এমপি হিসেবে বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং তার প্রবাস জীবন মিলিয়ে, এটি এখন আর নিছক খেলাধুলার বিষয় নেই; বরং এক রোমাঞ্চকর থ্রিলারে রূপ নিয়েছে।
তিন ফরম্যাটের ‘পারফেক্ট’ বিদায়ী মেনু
বেশিরভাগ ক্রিকেটারই বয়সের ভারে ধাপে ধাপে ফরম্যাট ছাড়তে থাকেন, শেষে গিয়ে হয়তো শুধু টি-টোয়েন্টিটা খেলে যান। কিন্তু সাকিব যেন পুরো সেটটাই পূর্ণ করতে চান। ঘরের মাঠে তিন ফরম্যাটের একটি করে ম্যাচ খেলার যে ইচ্ছা তিনি পোষণ করেছেন, তা বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। এর মানে হলো, তিনি নিজেকে খণ্ডিত কোনো খেলোয়াড় ভাবেন না; তিনি টেস্টের সাদা পোশাক, ওয়ানডের রঙিন জার্সি এবং টি-টোয়েনটির গতির ঝড়, সব মিলিয়েই একজন পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার হিসেবে মাঠ ছাড়তে চান।
কৌশলগত দিক থেকে নির্বাচকদের জন্য এটি এক বড় মাথাব্যথা। কারণ, শুধুমাত্র ‘বিদায়ী সংবর্ধনা’ দেওয়ার জন্য একজন সিনিয়র প্লেয়ারকে হুট করে দলে ঢোকানো দলের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। কিন্তু আবেগ আর ইতিহাসের পাল্লায় মাপলে, মিরপুরের মাটিতে শাকিবকে বিদায় বলতে না দেওয়াটা হবে এক প্রকার অন্যায়। বিসিবি এখন এক অদ্ভুত চ্যালেঞ্জের মুখে, দলের পালাবদল বা ট্রানজিশন পিরিয়ড ঠিক রাখা, নাকি কিংবদন্তির শেষ ইচ্ছাকে সম্মান জানানো?
রাজনীতির মারপ্যাঁচ: বাউন্ডারির বাইরের কঠিন খেলা
সমস্যাটা শাকিবের ফর্ম বা ফিটনেস নিয়ে নয়, সমস্যাটা তার বর্তমান ‘লোকেশন’ বা অবস্থান নিয়ে। গত আগস্টে সরকার পতনের পর থেকে নিরাপত্তা শঙ্কা এবং আইনি জটিলতা এড়াতে সাকিব দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাই তার এই বিদায়ী সিরিজের ক্ষেত্রে ব্যাটিং গড় বা স্ট্রাইক রেটের চেয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে বাইরের বিষয়গুলো।
সাকিব আল হাসান যেন নিরাপদে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে পারেন, সেজন্য বিসিবি এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে একটা সমঝোতায় আসতে হবে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস দেখুন! যে মানুষটা অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের মতো পরাশক্তির বিপক্ষে মাঠে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন, তাকেই আজ মাঠে নামার জন্য মাঠের বাইরে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা খুঁজতে হচ্ছে। যদি সব ঠিক থাকে, তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠের সিরিজটিই হতে পারে শাকিবের কাঙ্ক্ষিত বিদায়ী মঞ্চ। কারণ, পাকিস্তানের মতো বড় দলের বিপক্ষে গ্যালারি ভর্তি দর্শকের সামনে বিদায় নেওয়াটাই তার জন্য মানানসই।
ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ: শুধুই কি টাকা, নাকি ফিটনেস ড্রিল?
কূটনীতিক এবং ক্রিকেট কর্তারা যখন রাজনীতির দাবার চাল চালছেন, সাকিব তখন ব্যস্ত তার আসল কাজে, ক্রিকেট খেলায়। তিনি স্পষ্টই বলেছেন, বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে তার বর্তমান অংশগ্রহণ কেবল টাকার জন্য নয়, বরং জাতীয় দলে শেষবারের মতো ফেরার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখা। তিনি ভালো করেই জানেন, হুট করে টেস্ট ম্যাচে নেমে পড়াটা, তা তিনি সাকিব হলেও আত্মঘাতী হতে পারে।
যারা Sportslivehub-এ লাইভস্ট্রিমিং বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে তার খেলা দেখছেন, তারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন যে সাকিব গা ছাড়া ভাব নিয়ে খেলছেন না। তিনি এখনো নিজের রিফ্লেক্স এবং ফিটনেস ধরে রাখতে ঘাম ঝরাচ্ছেন। এটা কোনো অবসরপ্রাপ্ত খেলোয়াড়ের আনন্দভ্রমণ নয়; বরং একজন পেশাদার অ্যাথলেটের শেষ গ্র্যান্ড প্রিক্সের জন্য ইঞ্জিন গরম রাখার চেষ্টা। বাইরের হাজারো আলোচনার মধ্যেও তার এই মোটিভেশন প্রমাণ করে, মাঠের খেলায় তিনি এখনো কতটা ক্ষুধার্ত।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)
১. সাকিব আল হাসানের বর্তমান অবসরের স্ট্যাটাস কী?
সাকিব পরিষ্কার করেছেন যে তিনি এখনো কোনো ফরম্যাট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নেননি এবং তার পরিকল্পিত বিদায়ী সিরিজ পর্যন্ত একজন সক্রিয় আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় হিসেবেই তিনি খেলতে চান।
২. সাকিব বর্তমানে কেন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন?
গত আগস্টে পূর্ববর্তী সরকারের পতনের পর থেকে নিরাপত্তা শঙ্কা এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ২০২৪ সালের মে মাস (বা সরকার পতনের পর) থেকে তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন। তিনি সেই সরকারের একজন এমপি ছিলেন।
৩. সাকিব কীভাবে অবসর নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন?
তিনি বাংলাদেশের মাটিতে একটি পূর্ণাঙ্গ হোম সিরিজ খেলে বিদায় নিতে চান, যেখানে একটি টেস্ট, একটি ওয়ানডে এবং একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ থাকবে। সম্ভবত আগামী বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজটিই তার লক্ষ্য।
ডিসক্লেইমার: এই আজকের ট্রেন্ডিং (ব্লগ) কেবল লেখকের ব্যক্তিগত মতামত ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে। আলোচিত বিষয়গুলো ভেবে দেখুন, বিশ্লেষণ করুন, আর নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিন।
বিপিএল ২০২৬: ফাইনালে ওঠার দৌড়ে নোয়াখালী এক্সপ্রেস আসলে কতটুকু এগিয়ে
বিপিএল ২০২৬: মৌসুম শুরুর আগেই জেনে নিন কেমন হলো সব দলের একাদশ
বিপিএল ২০২৬: কোনো ঝামেলা ছাড়াই অনলাইনে টিকিট কাটার সহজ নিয়ম
বিপিএল ২০২৫ পয়েন্ট টেবিল : এবারের আসরে সবচেয়ে উন্নতি করা দলটির গল্প

