দিন দিন জৌলুস হারাচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ( বিপিএল )। শুরুর দিকে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও দিন দিন তা হারিয়েই ফেলছে। আইপিএলের পরেই স্থান পাওয়া এই লিগ এখন পিএসএল, বিগব্যাশের সঙ্গেও আলোচনায় আসতে পারছে না। গত বেশ কয়েক আসর থেকে কোনো ভালো মানের ক্রিকেটারও বের হচ্ছে না বিপিএল থেকে। প্রশ্ন হচ্ছে বিপিএলের গত পাঁচ আসরে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কি?
বিপিএলের প্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসান। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ” ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ও বিপিএল থেকে অনেকটা আগানো “। বিপিএলকে নতুন প্রতিভা তুলে আনার মঞ্চ ভাবা হলেও এখানে প্রাপ্তির খাতায় শুন্যই বলা চলে৷ বাংলাদেশের জাতীয় দলের এমনিতেই টি টোয়েন্টি রেকর্ড ভালো নয়। সেক্ষেত্রে বিপিএল হতে পারত খেলোয়াড় তৈরির কারখানা। কিন্ত বিপিএল থেকে হাতে গোনা দুই একজন খেলোয়াড় ছাড়া জাতীয় দলে সুযোগ পায়নি আর কেউ।
শেখ মেহেদিকে বিপিএল থেকে পাওয়া গেলেও আহামরি কিছু করতে পারেননি তিনি। নিয়তি যেন এটাই যে, এখান থেকে মানসম্মত ক্রিকেটার পাওয়া যায় না। অন্যদিকে, আইপিএল, পিএসএল থেকে বেরিয়ে এসেছে তাক লাগিয়ে দেওয়া পারফর্মার। আইপিএলের আবিষ্কার সূর্য কুমার যাদব তো বর্তমান সময়ে ভারতের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। ভারতের অন্যতম প্রধান বোলিং অস্ত্র যশপ্রীত বুমরাও এই আইপিএলের আবিষ্কার।
অন্যদিকে পিএসএলের আবিষ্কার শাদাব খান, হারিস রউফ, ইফতেখার আহমেদ, খুশদিল শাহর মতো ক্রিকেটার। যারা নজড় কাড়ছেন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে। তাছাড়া উইন্ডিজের সিপিএল থেকে রোভম্যান পাওয়েল, কাইল মায়ার্স, ব্রেন্ডন কিংয়ের মতো ক্রিকেটার বেরিয়ে এসেছে। সেখানে বিপিএল থেকে প্রাপ্তি শূন্যই বলা চলে। ফিরে দেখা যাক গত পাঁচ বছরে বিপিএলের অর্জন :
২০১৬ : সেরা পাঁচে ছিলেন তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাব্বির রহমান, মোহাম্মদ শেহজাদ এবং মুশফিকুর রহিম। বোলিংয়ে সেরা পাঁচে ছিলেন একমাত্র বাংলাদেশি শফিউল।
২০১৭ : সেরা পাঁচ ব্যাটারের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন তামিম ইকবাল। চতুর্থ স্থানে ছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। বোলিংয়ে সাকিব আল হাসান, আবু জায়েদ এবং মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
২০১৮ : সেরা পাঁচ ব্যাটারের গত আসরের থেকে এক ধাপ এগিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন তামিম ইকবাল। চতুর্থ অবস্থানে ছিলেন মুশফিক। বোলিংয়ে অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, মাশরাফি, রুবেল হোসেন এবং সাইফউদ্দিন।
২০১৯ : ব্যাটিংয়ের সেরা পাঁচে দ্বিতীয় অবস্থানে মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় অবস্থানে লিটন দাস। বোলিংয়ে শীর্ষে কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। তিন নম্বরে রুবেল এবং পাঁচ নম্বরে শহিদুল।
২০২২ : ২০২২ এ এসেও মেলেনি নতুন কোনো মুখ। সেরা পাঁচ ব্যাটারের মধ্যে তামিম ইকবাল। বোলিংয়ে শীর্ষে মোস্তাফিজুর রহমান। তৃতীয় অবস্থানে সাকিব আল হাসান।
ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে বিপিএলের অন্যতম সমস্যা হলো উইকেট। এই নিন্মমানের উইকেটে সুযোগ পেয়েও নিজেদের মেলে ধরতে পারছেন না ক্রিকেটাররা। আর মিরপুর স্টেডিয়াম খুব বেশি ব্যবহারের ফলে এখানে ভালো উইকেট তৈরি হয় না বলেও জানিয়েছিলেন কিউরেটররা। তাছাড়া ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের বিনিয়োগ ফেরানোর ব্যবস্থা করা ও স্থায়ী হওয়ার সুযোগও দেওয়া হয় না। তাই দল নিয়ে লম্বা পরিকল্পনাও করা সম্ভব হয় না। যার দরুন নতুন নতুন নামে প্রতি বছর নতুন নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি আসায় টুর্নামেন্টটির এই নড়বড়ে অবস্থা।