ইংল্যান্ড বনাম ভারত (৫ম টেস্ট – ১ম দিন)
এজবাস্টন টেস্টে টপঅর্ডারের ব্যর্থতায় দলীয় শতক পূরণ হওয়ার আগেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারতীয় ক্রিকেট দল। মনে হচ্ছিল, অল্পেই হয়তো গুটিয়ে যাবে সফরকারীরা। তখনই বীরের মতো বুক চিতিয়ে লড়াই করেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার রিশাভ পান্ত, যোগ্য সঙ্গ দেন রবিন্দ্র জাদেজা।
স্বভাবসুলভ ঝড় তোলা ব্যাটিংয়ে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন পান্ত। অন্যদিকে জাদেজা রয়েছেন তৃতীয় সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে। এ দুজনের ২২২ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ভর করে প্রথম দিন শেষে সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছেছে ভারত।
বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম দিনে কয়েক দফায় হারিয়ে গেছে ১৭ ওভার। খেলা হওয়া ৭৩ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩৩৮ রান করেছে ভারত। ইংলিশ বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালিয়ে আউট হওয়ার আগে মাত্র ১১১ বলে ১৪৬ রান করেছেন পান্ত। জাদেজা অপরাজিত রয়েছেন ৮৩ রানে।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ভারতের শুরুটা ছিল ভয়াবহ। অফফর্মে থাকা চেতেশ্বর পুজারাকে দেওয়া হয় শুভমান গিলের সঙ্গে ইনিংস সূচনার দায়িত্ব। দুজনের জুটির স্থায়িত্বকাল ছিল মাত্র ৬.২ ওভার। শুবমান আউট হন ১৭ রান করে, পুজারা করেন ১৩ রান।
হানুমা বিহারি ভালো কিছুর আভাস দিলেও ২০ রানের বেশি করতে পারেননি। বিরাট কোহলি আউট হন অদ্ভুতভাবে।
বাজে সময়টা যেনো কাটছেই না ভারতের সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলির। বরং খারাপ সময়ে নিজের ভাগ্যও পাশে পাচ্ছেন না সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার। সবশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে দুর্ভাগ্যজনকভাবেই বোল্ড হয়েছেন এ ব্যাটিং সুপারস্টার।
ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন ম্যাচ শুরুর আগেই বলে দিয়েছিলেন, কোহলি যদি ত্রিশ পেরোতে পারে তাহলে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেবেন। কিন্তু সেই ত্রিশও ছোঁয়া হয়নি কোহলির, পাওয়া হয়নি সেঞ্চুরি, বেড়েছে অপেক্ষা।
চার নম্বরে নামেন কোহলি। দেখেশুনে তিনি সাবধানী শুরুই করেছিলেন। সঙ্গে জোড়া চারের মারে তাকে বেশ আত্মবিশ্বাসীই মনে হচ্ছিল। কিন্তু ক্ষণিকের সিদ্ধান্তহীনতাই যেনো কোহলির কাল হলো।
ডানহাতি পেসার ম্যাথু পটসের করা ইনিংসের ২৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলটি ছিল অফস্ট্যাম্পের বাইরে ইনসুইঙ্গিং ডেলিভারি। অফস্ট্যাম্পের বেশ বাইরে হওয়ায় শুরুতে ড্রাইভ করতে চেয়েও পরে ব্যাট উঠিয়ে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন কোহলি। কিন্তু দেরি করে ফেলেন এই সিদ্ধান্ত নিতে।
কোহলি ব্যাট পুরোপুরি ওঠানোর আগেই বলটি তার ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় স্ট্যাম্পে। ফলে থেমে যায় যার ১৯ বলে ১১ রানের ইনিংস। আর এতে আরও দীর্ঘায়িত হলো কোহলির সেঞ্চুরিবিহীন সময়। ফের কবে সেঞ্চুরি করবেন তিনি, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
পরে দলীয় শতকের দুই রান বাকি থাকতে সাজঘরের পথ ধরেন ১৫ রান করা শ্রেয়াস আইয়ারও। মাত্র ৯৫ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়লেও, পান্তের ব্যাটে ছিল না এর কোনো ছাপ। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন তিনি। অন্যপ্রান্তে জাদেজা দেন পরম নির্ভরতা।
ওয়ানডে স্টাইলে খেলে ৫১ বলে ফিফটি পূরণ করেন পান্ত। সেখান থেকে সেঞ্চুরিতে যেতে নেন আর ৩৮ বল। সবমিলিয়ে ৮৯ বলে সেঞ্চুরি করে টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের উইকেটরক্ষকদের মধ্যে দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান হয়েছেন পান্ত। এর আগে রেকর্ডটি ছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির দখলে, ৯৩ বলে।
সেঞ্চুরি পেরিয়েও থামার নাম ছিল না পান্তের। পরের ২১ বলে আরও চারটি চার ও তিনটি ছয়ের মারে করে ফেলেন ৪৬ রান। মনে হচ্ছিল, দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি হয়তো করেই ফেলবেন পান্ত। কিন্তু তখনই ইংল্যান্ডকে ব্রেক থ্রু এনে দেন জো রুট।
ছন্দ ধরে রেখে মারমুখী শট খেলতে গিয়ে রুটের বলে স্লিপে ধরা পড়েন পান্ত। আউট হওয়ার আগে ১৯ চার ও ৪ ছয়ের মারে মাত্র ১১১ বলে করেন ১৪৬ রান।
দলীয় ৩২০ রানে পান্তের বিদায়ে ভাঙে ২২২ রানের জুটি। যা কি না টেস্ট ক্রিকেটে ষষ্ঠ উইকেটে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ। পান্ত ফেরার পর শার্দুল ঠাকুর আউট হন ১ রান করে। তবে নিজের উইকেট বাঁচিয়ে রেখে ১৬৩ বলে ১০ চারের মারে ৮৩ রানে অপরাজিত রয়েছেন জাদেজা। এবং অপর পাশে আছেন মোহম্মদ শামি।
আজ বিকেল ৩:৩০ টায় ২য় দিনের খেলা শুরু হবে।
ইংল্যান্ড বনাম ভারত এর স্কোরবোর্ড
ভারত (১ম ইনিংস) – ৩৩৮/৭ (৭৩.০)
ইংল্যান্ড বনাম ভারত ম্যাচের একাদশ
ইংল্যান্ড | বেন স্টোকস (অধিনায়ক), স্যাম বিলিংস (উইকেটরক্ষক), জ্যাক ক্রাওলি, অ্যালেক্স লিস, জো রুট, অলি পোপ, ম্যাটি পটস, জনি বেয়ারস্টো, জ্যাক লিচ, স্টুয়ার্ট ব্রড, জেমস অ্যান্ডারসন |
ভারত | যশপ্রিত বুমরাহ (অধিনায়ক), ঋষভ পান্ত (উইকেটরক্ষক), চেতেশ্বর পূজারা, শুভমান গিল, বিরাট কোহলি, হনুমা বিহারী, রবীন্দ্র জাদেজা, শ্রেয়াস আইয়ার, মোহম্মদ শামি, শার্দুল ঠাকুর, মোহম্মদ সিরাজ |